Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:15 am

ই-সিগারেটের প্রচারণায় গ্রামীণফোন!

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ই-সিগারেটের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়ানোকে গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। এই তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নাম এবং লোগো ব্যবহার করে ১০ এপ্রিল একটি পোস্ট দিয়েছে তাদের ফেসবুক পেইজে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তামাক ব্যবহার এবং ভ্যাপিংয়ের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একইসাথে ভ্যাপিং ফুসফুসের সংক্রমণ ও অসুস্থতা বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যা করোনা সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অতিসত্ত্বর এই প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, তা না হলে ই-সিগারেট ব্যবহার উৎসাহিত করে করোনা মহামারীকে আরো ভয়াবহ করার দায়ভার গ্রামীণফোনকেই বহন করতে হবে। তামাক বিরোধী আন্দোলনকারীদের সংগঠন প্রজ্ঞার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ই-সিগারেট। চিকিৎসকরা বলছেন, ই-সিগারেটে উচ্চমাত্রার নিকোটিন ও ক্যামিকেলে তৈরি এসিড, মানবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এতে শরীরে রক্তপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পুড়ে যায় শ্বাসনালী। এ অবস্থায় বুধবার ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হলেও, দাবি উঠেছে পুরো দেশে তা নিষিদ্ধের।

ই-সিগারেট। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই নানা ফ্লেভারের এই ভ্যাপিংয়ের ব্যবসা এখন জমজমাট।

সাধারণ সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হওয়ায় এরই মধ্যে প্রতিবেশি ভারতে ই-সিগারেটের উৎপাদন ও বিপনন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন অমান্যে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ রুপি জরিমান ও ১ বছরের বছরের সাজা।

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, ভারতে প্রায় ৪শ ব্র্যান্ডের ই-সিগারেট বাজারজাত হয়। এই ভ্যাপিং নিষিদ্ধ করা মোদি সরকারের নির্বাচনি ওয়াদা ছিলো।

শুধু ভারত নয়, ই-সিগারেট নিয়ে তোলপাড় চলছে যুক্তরাষ্ট্রেও। ৭ জনের মৃত্যুর পর সানফ্রানসিসকো এবং নিউইয়র্ক রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এটি। কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়াও।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কওমো বলেন, টেবাকো এবং মেন্থল ফ্লেবারের ইসিগারেট নিষিদ্ব করা হয়েছে নিউইয়র্কে। ৬৮ ভাগ ব্যবহারকারীই বিভিন্ন ফ্লেভারের ই-সিগারেট ব্যবহার করেন এবং তরুণদের কাছে এটি বেশি পছন্দনীয়।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়েট্রিক টেবাকো কনসোর্টিয়াম বলছে, ই-সিগারেটের কারণে অজানা অনেক রোগ দেখা দিচ্ছে মার্কিনীদের।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ডা: জনাথন উইনিকফ বলেন, এক রোগী আসার পর, ভাবলাম হয়ত স্বাভাবিক নিয়োমোনিয়া। কিন্তু অ্যান্টিবায়েটিক প্রয়োগেও কাজ হচ্ছিলো না। ই-সিগারেট তার শরীরের রক্তপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, পুড়ে গেছে শ্বাসনালীও। উচ্চমাত্রার নিকোটন ও কেমিকেলের মিশ্রনে সৃষ্ট এসিড মানবদেহে মারাত্মক বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।

ভ্যাপিং নিষিদ্ধে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো। পুঁজি হারানোর ভয়ে দোকানিরাও।

নিউইয়র্ক স্মোক অ্যান্ড ভ্যাপ দোকানের দোকানি আসিফ লাখানি বলেন, খুবই চিন্তায় আছি। কারণ পুরো ব্যবসার ওপর আঘাত। যেসব কাস্টমার প্রতিদিন এখানে আসতেন নিউইয়র্ক রাজ্য সরকারের সিদ্বান্তে তারাও ক্ষুদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারুণ্যের ক্রেজ হলেও, স্বাস্থ্যহানির শঙ্কায় বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে ই-সিগারেট। তাই, এর বাজারজাত ও উৎপাদন বন্ধের দাবি অনেকেরই।

###