Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:27 pm

ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে সরকারি ছুটি এক দিন বাড়ানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের সময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য কমানোর পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে এক দিনের সরকারি ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর হওয়ায় এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে। এতে আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৯০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১৬ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ১৮ এপ্রিল বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। কিন্তু আমাদের গণপরিবহনে সড়কপথে ছয় থেকে ১০ লাখ, নৌপথে আট থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় এ ৫০ লাখ যাত্রীর একটি বড় অংশ আটকে যাচ্ছে। এ কারণে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে।

তিনি বলেন, অন্যথায় ২১ এপ্রিল সড়ক-রেল-নৌপথের পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। এজন্য ২০ এপ্রিল এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি যাত্রাপথে বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে রাজধানীর পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারেন। এতে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বহুলাংশে বেড়ে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোয় যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা এবং ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

ঈদযাত্রায় বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সদস্যদের ১৫ রমজানের পর থেকে আগেভাগে বাড়ি পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। তিনি চাঁদাবাজি বন্ধ করা ও সব জাতীয় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার দাবি জানান।

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই প্রথমবারের মতো ঈদযাত্রার টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে রেলপথে যাত্রীদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে। তাই অনলাইন ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়, এমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে টিকিট তুলে দেয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি সতর্ক করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের আসন্ন ঈদে আগে ও পরে ১০ দিনের বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি দখল করে নেয়ায় এবারের ঈদেও যাত্রীসাধারণকে এসব ফ্লাইটে টিকিট কয়েকগুণ বাড়তি দামে কিনতে হতে পারে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকার সংকটসহ নানা কারণে এবারের ঈদে ব্যাপকভাবে অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, টানাপার্টিসহ টার্মিনালে নানা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে যাত্রীসাধারণের ঈদ আনন্দ মাটি হতে পারে। তাই প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে সিভিল পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সূর্য, সংগঠনের সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।