ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ১৪ পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ভোগের আশঙ্কা

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের আশঙ্কা তৈরি করেছে মহাসড়কের উন্নয়নকাজ। ঈদ এলেই যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক দিয়ে।

গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চার লেন রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। উন্নয়ন কাজই এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরেফেরা মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনো পর্যন্ত ১৪টি ঝুঁকিপুর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ স্থানগুলো আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে মহাসড়কের কাজ দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, মহাসড়কে চলাচলকারী বাস ও ট্রাকচালকরা জানিয়েছেন দ্রুত সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হলে ঈদ যাত্রায় স্বস্তি আসবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদযাত্রায় সড়কপথে উত্তবঙ্গের প্রায় ২২ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এ সড়কপথ। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় যানজট, যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি। এছাড়া মহাসড়কে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজ চলমান থাকার কারণে বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন চলাচল করছে এক লেন দিয়ে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কটিতে চার লেনে প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজ চলছে। রাস্তার অনেক জায়গায় যানবাহন এক লেনে চলাচল করার কারণে দেখা দিচ্ছে যানজট ও ধীরগতি। মহাসড়কের দুপাশে ড্যাম ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য খানাখন্দে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। আবার অনেক জায়গায় রাস্তা ঘুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। কখনও ধীরগতি, কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে যাত্রী পরিবহনে থাকা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে, নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তরের লেন খুলে দিলেও ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেয়ায় ঝুঁকিপুর্ণ পুরোনো সেতু দিয়েই চলাচল করছে যানবহন। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

হেগো-মীর আকতার জেভি প্রকল্পের ম্যানেজার এখলাস উদ্দিন বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। মহাসড়কের যেসব জায়গায় খানাখন্দে রয়েছে সেগুলো জায়গায় মেরামত করে দেয়া হবে। সলঙ্গা বাজার, দাদপুর বাজার, ঘুড়কা বাজার, ভুইয়াগাঁতি বাজার ও চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় ১৫ রমজানের মধ্যে চার লেনের নতুন সড়ক খুলে দেয়া হবে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল কবির বলেন, সাসেক-২ এর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা পুলিশ এবং আমাদের দুই দফা মিটিং হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু থেকে চান্দাইকোনো পর্যন্ত ১৪টি ঝুঁকিপুর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো ১৫ রমজানের মধ্যে তারা সংস্কার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে আমাদের ১০টা হুন্ডা মোবাইল টিম, ১৬টা পয়েন্টে ১৬টা পিকেট টিম কাজ করবে। সেই সঙ্গে মাইকিং ও জিডিটাল সাইনবোর্ড লাগানো হবে। সবমিলিয়ে এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে আমাদের মোট ১৪৪ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবে।

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখতে জেলা পুলিশের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। মহাসড়কে আমাদের ১৫ থেকে ১৮টা মোবাইল টিম থাকবে। তবে ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে কতজন পুলিশ সদস্য কাজ করবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুল রহমান মণ্ডল বলেন, মহাসড়কে প্রায় ১৪টা ঝুঁকিপুর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সাসেক-২ এর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দিন আগে মিটিং করেছি। ১২ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে তারা সেগুলো সংস্কার করে দেবে। ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০