শেয়ার বিজ ডেস্ক: কয়েকদিন ধরে রাজধানী থেকে নাড়ির টানে ঘরে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। সড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ, বাড়ছে ঈদযাত্রার ভিড়। একই সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। দেশের সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্য বগুড়ায় চার, সুনামগঞ্জ দুই, নাটোর, সিলেট একজন করে নিহত হন।
বগুড়া: বগুড়ায় বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত একজন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা বলছেন একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে প্রাইভেটকারকে চাপা দেয় বগুড়াগামী বাসটি।
নিহতরা হলেনÑবগুড়া সদরের চারমাথা পশ্চিম গোদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাইম মণ্ডল (৫৫), বাসের ম্যানেজার ও নিশিন্দা এলাকার আব্দুল হান্নান এবং চারমাথা বাস টার্মিনালের চেইন মাস্টার পালশা এলাকার আলমগীর হোসেন (৪১)। নিহতরা সবাই প্রাইভেটকারের যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ফাইম প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন। অন্য একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহতদের বিষয়ে বগুড়া ছিলিমপুর (মেডিকেল) পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই লালন হোসেন বলেন, এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন আছেন। তার নামপরিচয় এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ১০টার দিকে বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। বাসার ভেতর থেকে বের হয়ে দেখি মানুষজনের ভিড়। কাছে গিয়ে দেখি প্রাইভেটকার বাসের নিচে চলে গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বগুড়া সদর থানা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান নিহতদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেন। তবে বিস্তারিত কিছু তিনি জানাতে পারেননি।
নাটোর: ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফেরার জন্য ট্রেন থেকে নেমে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন জিয়াউর রহমান। পথে একটি মাইক্রোবাস ভ্যানকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান জিয়াউর। এতে গুরুতর আহত হন ভ্যানচালক জামিল (৩০)। গতকাল শনিবার সকালে নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম সোনাপাতিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জিয়াউর রহমান উপজেলার হলুদঘর পশ্চিমপাড়া এলাকার রহমতুল্লাহর ছেলে। তিনি গার্মেন্টস কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহত ভ্যানচালক জামিল পাশের নওগাঁর আত্রাই থানার ডাকা গ্রামের মৃত হারুনের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নলডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার জন্য রাতে ট্রেন যোগে এসে সকালে মাধনগর রেলওয়ে স্টেশনে নামেন জিয়াউর। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে পৌর শহরের সোনাপাতিল এলাকায় পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস ভ্যানটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ভ্যানের যাত্রী জিয়াউর রহমান মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে এবং মাইক্রোবাসটি জব্দ করে চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
সিলেট: সিলেট তামাবিল মহাসড়কে পিকআপভ্যান ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার ভোর ৪টায় জৈন্তাপুর উপজেলার দামড়ী ব্রিজ নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত প্রাইভেটকার আরোহী মোছাব্বির আহমদ (৪৫) উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের ডেমা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাৎক্ষণিকভাবে বাকি আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে দরবস্ত এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি প্রাইভেটকার সিলেট তামাবিল মহাসড়কের দামড়ী ব্রিজে পৌঁছামাত্র বিপরীত দিক থেকে আসা সিলেটগামী একটি ভারতীয় পণ্যবোঝাই একটি পিকআপভ্যান (ডিআই ট্রাক) প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিলে কারটি পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এ সময় একজন নিহত ও দুজন আহত হন। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনায় একজন নিহত এবং অপর দুজন আহত হয়েছেন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে নাতনির বাড়ি ইফতার দিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আরেক নাতনিসহ দাদি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়কের গাগলী এলাকায় মালবাহী ট্রাক মোটরসাইকেলের পেছন ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলে থাকা দাদি-নাতনি নিহত।
নিহত দাদি শামসুন্নাহার (৭৫) ও নাতনি জান্নাত (১৪) দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের তলবাউসী গ্রামের আতাউর রহমানের মা ও ছোট মেয়ে।
এ ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী শহীদুল ইসলামকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের আত্মীয়রা জানান, ছোট নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে দিরাই থেকে সুনামগঞ্জ সদরের বড়ঘাট এলাকার আরেক নাতনির বাড়ি ইফতার নিয়ে যান। রাতে মোটরসাইকেলে করে দিরাই ফেরার পথে গাগলী এলাকায় একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে দাদি-নাতনি দুজনই নিহত হন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৪ জন এসেছিলেন হাসপাতালে। একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আরেকজন হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে। মোটরসাইকেল চালককে সিলেটে রেফার করা হয়েছে। একজন কিছুটা সুস্থ আছেন।