নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এই সপ্তাহেও নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। কেজিতে নতুন করে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আমদানি করা হলুদের দাম। একইভাবে আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। দারুচিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকার মতো। লবঙ্গের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকার মতো। একইভাবে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকার মতো। নতুন করে দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে চিনি, আটা ও ময়দাসহ বেশ কিছু পণ্য।
এদিকে ঈদের পর থেকেই বাড়তি মাছের দাম। অন্যদিকে মাংসের দোকানে ক্রেতা কম থাকলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দামও।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। তাই দামও কিছুটা বেশি। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, ভালো মাছের পাশাপাশি কম দামের মাছগুলোর এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের বড় কই মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া বড় সাইজের ২২০ টাকা কেজি, রুই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, পাবদা আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছোট সাইজের ইলিশ ৮৫০ টাকা কেজিতে আর মাঝারি সাইজের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ এবং দেড় কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে গরু, খাসির মাংসের দোকানগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর থেকে এখনও সেভাবে মাংস বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতারা এখন কম মাংস কিনছেন। বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সব ধরনের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লাল ডিম ১২০ টাকা ডজন, হাঁসের ডিম ১৮০ এবং দেশি ডিম ১৮০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচা বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হক বলেন, ঈদের পর যখন মানুষ মাংস খাওয়া ছেড়ে মাছের প্রতি বেশি আগ্রহী হলো তখন থেকেই মূলত মাছের দাম বেড়েছে। ঈদের পর থেকে যে মাছের দাম বাড়ল এখনও তা কমেনি। পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই এগুলো সাধারণত কম দামে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন সেগুলোও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজারেই সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। আমাদের কেনা পড়ছে আগের চেয়ে বেশি দামে, তাই খুচরা বাজারে আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কেনা দাম কম পড়তে শুরু করলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। আসলে মাছের দাম ঈদের পর বৃদ্ধি পেয়েছে, এরপর আর কমেনি।
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এই সপ্তাহেও নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা আদার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে এই পণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আমদানি করা হলুদের দাম কেজিতে বেড়েছে সাড়ে সাত শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা,? যা গত সপ্তাহের তুলনায় অন্তত দুই টাকা বেশি। গত সপ্তাহে ৭৮ টাকায় ১ কেজি চিনি পাওয়া গেছে। এদিকে গত সপ্তাহে যে হলুদ ২২০ টাকায় পাওয়া যেত, এই সপ্তাহে সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। ১০০ টাকা কেজির আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৯৫০ টাকা কেজি যে লবঙ্গ পাওয়া যেত, একই সপ্তাহে সেই একই লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। একইভাবে ৪৬০ টাকা কেজি দরের দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে খোলা আটা ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এই সপ্তাহে সেই একই আটা ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ৫৪ টাকা কেজি দরের প্যাকেট আটা এই সপ্তাহে ৫৫ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারের ভালো ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকা কেজি দরে ময়দা পাওয়া গেছে, এই সপ্তাহে ৫৮ টাকার নিচে কোনো ময়দা নেই। মার্কস গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই একই পণ্য বিক্রি হতো ৬৭০ টাকা কেজিতে।
এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার পর খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা কমেছে। তবে সরকার যে হারে কমানোর কথা বলেছে, সে হারে দাম কমেনি। এমনকি নতুন দামের সয়াবিন তেল এখনও বাজারে আসেনি। এখনও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮০ টাকা লিটার। কোথাও কোথাও ১৬৬ টাকা লিটার পাওয়া যাচ্ছে সয়াবিন তেল। গত সপ্তাহে এই সয়াবিনের দাম ছিল ১৭০ টাকা লিটার। অর্থাৎ খোলা সয়াবিন তেল আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। তবে এক লিটার বোতলজাত ও ৫ লিটার বোতল জাতের দাম কমেছে লিটারে ১০ টাকার মতো।
এক লিটার বোতলজাত এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এই সয়াবিনের দাম রাখা হয় ১৯৫ টাকা। আর পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম কমে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ লিটারে কমেছে ৬০ টাকার মতো। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় সরকার গত ১৭ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আর ২ লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ৩৯৮ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয় ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৯৮০ টাকা থেকে কমিয়ে আনা হয় ৯১০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত এ দাম ১৮ জুলাই থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এর তিন দিন পর নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) থেকেই বাজারে নতুন দামের তেল পাওয়ার কথা। তবে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল মিলছে না। অবশ্য আগের দাম উল্লেখ করা বোতলের সয়াবিন তেল কিছুটা কম দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।