ঈদুল ফিতর: বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুতেই ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার ঈদ সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা, দাম বেশি রাখার অভিযোগ আর কাক্সিক্ষত টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভ নিয়ে।
গতকাল শুক্রবার দেওয়া হয়েছে ২৯ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত যাত্রার টিকিট। তবে গাবতলী, মাজার রোড, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে ২, ৩ ও ৪ জুনের টিকিটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন বাংলাদেশে ঈদ হবে। সে কারণে আগের তিন দিনের টিকিটই বেশি চাচ্ছেন ক্রেতারা।
তারা বলছেন, প্রভাবশালীদের মনে রাখতে সামনের দিকের ভালো আসনগুলো আগে থেকেই বুক করে রেখেছেন মালিকরা। আর এ জন্য তৈরি হয়েছে টিকিটের কৃত্রিম সংকট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিক ইকবাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় যাবেন। টিকিট কাউন্টারে এসেছিলেন ভোর সাড়ে ৩টায়। সকাল ৮টার দিকে কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়েছেন তিনি। তবে দাম নিয়ে তার অভিযোগ রয়েছে। উল্লাপাড়ার নন-এসি টিকিটের দাম ৩০০ টাকা। কিন্তু আজ নেওয়া হচ্ছে ৪২০ টাকা। একইভাবে এসি বাসের টিকিট ৭০০ টাকার বদলে ১৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।”
তমাল হোসেন নামে একজন অভিযোগ করেন, প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া নেয় পরিবহন কোম্পানিগুলো। নওগাঁর ভাড়া অন্য সময় ৪০০ টাকা। এখন নিচ্ছে ৫৯০ টাকা। এটা সবসময় করেন।
নাবিল পরিবহনের টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে সেখানে ভিড়ও নেই। এছাড়া দেশ ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহনের ঈদের অগ্রিম টিকিটও দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে।
গাবতলীতে এসআর ও আলহামরা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এসআর পরিবহনের লঞ্চের টিকিট দেওয়া হলেও এসি বাসের অগ্রিম টিকিট দিচ্ছে না।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহমুদুল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘২ জুন বগুড়া
যাওয়ার জন্য রাত ৩টায় টিকিট কিনতে এসেছিলেন। সামনের দিকে সিট থাকলেও আমাকে দেওয়া হয়েছে পেছনের সিট। তাহলে আগে এসে কী লাভ হলো!
শুভ নামে আরেকজন বলেন, টিকিটের জন্য আগে এসে বসে থাকলাম। কিন্তু এখন বলছে এসি টিকিট দেবে না। এটা আগে জানানো উচিত ছিল, তাহলে এখানে কষ্ট করে আসতাম না।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআর পরিবহনের ব্যবস্থাপক আমিন নবী বলেন, কাউন্টার এবং অনলাইনে একই সময়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সিরিয়াল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এসি বাস কম বলে এখন টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এখানে যে সিট ফাঁকা আছে সেটাই আমরা দিচ্ছি। আর আমাদের সাতটা এসি বাসের মধ্যে তিনটা নষ্ট। ঈদের আগে এগুলো পাব কি না নিশ্চিত না। ঈদের সময় যানজট থাকলে নন এসির যাত্রীদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া যায়। কিন্তু এসি বাসের যাত্রীদের নন এসিতে দেওয়া যায় না। এ জন্য এসি বাসের টিকিট বিক্রি করছি না।”
২ জুন পঞ্চগড় যাওয়ার একটি টিকিট কিনেছেন মো. মাসুদ ইসলাম নামে একজন। তিনি জানান, পঞ্চগড়ের ভাড়া ৬৫০ টাকা। তিনি বলেন, তিন তারিখের টিকিট চেয়েছিলাম। কিন্তু দিল ২ তারিখের টিকিট। তাও দাম ২০০ টাকা বেশি, সাড়ে ৮০০ টাকা রেখেছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, সামনের দিকের টিকিট সবাই শেষ হয়ে গেছে। যারা আগে এসেছে তারা সামনের দিকের টিকিট আগেই নিয়ে গেছেন। যারা পরে এসেছেন তারা পেছনের দিকের টিকিট পেয়েছেন। আর আমরা সরকারি নির্ধারিত ভাড়াই রাখছি। এক টাকাও বেশি রাখা হচ্ছে না।’
কল্যাণপুরের কয়েকটি কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে ২, ৩ এ ৪ জুনের বেশিরভাগ পরিবহনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তবে ২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত বাসের টিকিট এখনও পাওয়া যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ১০টায় শ্যামলী এসপি পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও ২ তারিখের পরের কোনো টিকিট নেই। এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা কামরুল ইসলাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০