ঈদের আগে ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি ধার বাড়ছে

রোহান রাজিব: ঈদ উপলক্ষে ক্যাশ টাকা উত্তোলনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের জন্য ধার বাড়িয়েছে ব্যাংক। এছাড়া তারল্য সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংকও স্বল্পমেয়াদি ধার করছে। ফলে আন্তঃব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি ধারের চাপ বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংক সাত হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ধার করে। আগের দিন এ ধারের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে আন্তঃব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি ধারের চাপ বেড়েছে। এপ্রিল মাসের আট কার্যদিবসে ৬২ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ধার করা হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ঈদের আগে গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা কয়েকগুণ বাড়ে। ফলে এ সময় অনেক ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দেয়। এ সংকট মোকাবিলায় আন্তঃব্যাংক কলমানি বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো। নগদ টাকার সংকট বেশি হলে আন্তঃব্যাংক কলমানিতে বেশি সুদে অর্থ ধার করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরু থেকে আন্তঃব্যাংক বাজারে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। গত ২ এপ্রিল এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ধার করে। ৩ এপ্রিল এ ধারের পরিমাণ বেড়ে সাত হাজার ৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ৪ এপ্রিল ধারের অঙ্ক ছিল আট হাজার ৮০৫ কোটি, ৫ এপ্রিল আট হাজার ৭৩ কোটি, ৬ এপ্রিল আট হাজার ৫৭৬ কোটি এবং ৯ এপ্রিল ৯ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ধার করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ঈদের আগে প্রতি বছরই ক্যাশ উত্তোলনের চাপ থাকে। কারণ ঈদের আগে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মকর্তাদের স্যালারি-বোনাস দিয়ে থাকে। এছাড়া মানুষ ঈদকেন্দ্রিক নগদ টাকা হাতে রাখে। তাই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার চাহিদা বেশি থাকে। চাহিদা মেটাতে কল মানি মার্কেটে ধার করে ব্যাংক। আমরা এখনও পুরোপুরি ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারিনি। ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারলে এ চাপ থাকত না।

গতকাল আন্তঃব্যাংক স্বল্পমেয়াদি সাত হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ধারের মধ্যে এক দিন মেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। গড়ে ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে এ লেনদেন হয়। আগের দিন সোমবার কলমানিতে পাঁচ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যার গড় সুদ ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। কলমানি ছাড়াও আন্তঃব্যাংকে ৩ থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ধার নেয় ব্যাংকগুলো। এসব লেনদেনে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ উঠছে। মাঝে আন্তঃব্যাংকে আরও বেশি সুদ উঠছিল। তবে মৌখিক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তঃব্যাংক লেনদেনেও কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না। আন্তঃব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত ধার করে চলছে ব্যাংকগুলো। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ধারের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা।

কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়মের ফলে গ্রাহকদের আস্থা কমে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। ডলার কেনার কারণেও অনেক ব্যাংকের জরুরি নগদ টাকার প্রয়োজন পড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও ঋণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে তারল্য সংকট ভুগছে। ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে স্বল্পমেয়াদি চাহিদা বেড়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানত বেড়ে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১৪ লাখ ৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। গত বছর পুরো ব্যাংক খাতে আমানত ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যাংক খাতে চলমান এ পরিস্থিতির মধ্যে আগামী জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমার পরিবর্তে নতুন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে বৈশ্বিক সংকটে রপ্তানি খাতকে চাঙ্গা রাখতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত রিজার্ভের ডলার দিয়ে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ওপর চাপ কমাতে গঠন করা হয় কম সুদের এ রপ্তানি সহায়ক তহবিল। তবে গত তিন মাসে রপ্তানি সহায়ক তহবিলের ঋণের সুবিধা মূলত নিয়েছেন তারল্য-সংকটে পড়া ছয় ব্যাংকের গ্রাহকরা। সব মিলিয়ে এসব ব্যাংক পেয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংক ও একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকই তারল্য-সংকটে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সম্প্রতি বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার নেয়।

রপ্তানি সহায়ক তহবিল পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে টাকা নিয়ে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন রপ্তানিকারকরা। তারা আগে কাঁচামাল আমদানি করার পর ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। এখন তারা এ তহবিল থেকে আগেই টাকা নিয়ে সেই অর্থ ব্যাংকে জমা করে রাখছেন। পরে কাঁচামাল আমদানি করা হলে সেখান থেকে খরচ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য-সংকট মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এ উদ্যোগ নিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০