বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ব্যাংক লুটের পর একই কাণ্ড সংঘটিত হয়েছে একই জেলার আরেক উপজেলা থানচিতে। ব্যাংক লুটের জন্য বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে দুর্বৃত্তরা বান্দরবানের রুমা অন্ধকার করেছিল। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে থানচির ডাকাতিতে আলো-ঝলমল দুপুরকেই বেছে নিল।
প্রকাশ্যে থানচিতে বুধবার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। থানচি সদরের শাহজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাজারে ঢোকে। এরপর থানচি উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের শাখায় ঢুকে টাকা নিয়ে যায় তারা। সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ ও কৃষি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তারা লুট করে। কমান্ডো কায়দায় অপারেশন শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ার চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তিনটি গাড়িতে চাঁদাপাড়া এলাকার সড়কের দিকে তারা চলে যায়। দুটি উপজেলার দুই সরকারি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতির ঘটনায় পুরো বান্দরবান জেলায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জেলার সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় বৃহস্পতিবার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
রুমা বাজারে ঢোকার প্রায় এক কিলোমিটার আগেই সোনালী ব্যাংকের কার্যালয়। এর বিপরীত পাশে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স। ব্যাংক থেকে থানা ভবনের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার; আর রুমা বাজারে সেনাবাহিনী ও বিজিবির ক্যাম্পও রয়েছে। তাই এটিকে নিরাপদ এলাকা বলা চলে। এ অবস্থায় ডাকাতি সংঘটিত হওয়া দুঃসাহসিক কাণ্ডই বটে!
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। রুমায় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে তুলে নেয়া হয়েছে ভল্টের চাবি না দেয়ার ‘অপরাধে’। অবশ্য গতকালই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার দায়িত্বশীলতায় সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি; ওই ব্যাংকের ভল্টে থাকা সব টাকা অক্ষত আছে।
ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে মর্মে অনেকে বলছেন। এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। তারা কাউকে দোষারোপ না করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারেই মনোযোগ বাড়াবেন বলেই প্রত্যাশা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ আমরা যতটুকু শুনেছি, তা-ই বলছি’। আমাদের মনে রাখতে হবে, এখন কোনো বেফাঁস মন্তব্য ব্যাংকারদের সাহস ও মনোবল ভেঙে দিতে পারে। কিংবা প্রকৃত দোষীরা আড়ালে চলে যেতে পারে। তাই রুমা-থানচির ব্যাংক ডাকাতিকে অ্যালার্মিং হিসেবে নিয়ে দেশের সব এলাকা বিশেষ করে দুর্গম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে হবে। আগেও একাধিক কৌশলে ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হয়ে উঠে দেশের ব্যাংকগুলো। কিন্তু এবারের চুরির কৌশল ভিন্ন রকমের। পুরোপুরি সশস্ত্রভাবে। পাহাড়ের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এলাকায় এলোপাতাড়ি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এভাবে হামলা হওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাত। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এখন অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।