Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:40 pm

ঈদের আগে মসলার ঝাঁজে পুড়ছে পকেট

প্রতিনিধি, রাজশাহী : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সর্ববৃহৎ মসলার বাজার সাহেব বাজার। পুরো মসলার বাজারই এখন সিন্ডিকেটের কবলে। গত এক সপ্তাহে জিরা, এলাচ ও লবঙ্গের মতো মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। অথচ এসব মসলা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে।

কোরবানির ঈদকে ঘিরে বাজারে শুরু হয়েছে নানান প্রস্তুতি। কিন্তু উৎসবের আগে বাজারে গিয়ে সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। মসলার আকাশচুম্বী দামে পুড়ছে তাদের পকেট। গত কয়েক সপ্তাহে হঠাৎ করেই মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করতে অসুবিধায় পড়ছেন। জোগান সংকট, চাহিদার বৃদ্ধি এবং বাজার সিন্ডিকেটের কারণে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিশেষত বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

রাজশাহীর সর্ববৃহৎ মসলার বাজার সাহেব বাজার। সেখানে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মসলা ১০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই চাল-ডাল-আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সে তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলাচ দানা, জিরা, লবঙ্গ, মরিচ, হলুদ, ধনিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের মসলা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরাতে ছোট এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই এলাচের কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। আর ভালো মানের বড় এলাজ প্রতি কেজি ৪ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৮০০ টাকায়।

লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম বেড়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৫৫৭ টাকায়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। গোলমরিচ প্রতি কেজি হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি দারচিনি ৭০০ টাকা, হলুদ ৩৫০ টাকা, কালিজিরা ৪০০ টাকা, কিশমিশ ৮০০ টাকা, তেজপাতা ১২০ টাকা আর সাদা সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এসবের কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে এখন মসলার দাম অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাদের দাবি অনুযায়ী মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে দুই কারণে। প্রথমত, দেশে এখন চলছে ডলার সংকট। ডলারের অভাবে এলসি করা যাচ্ছে না। একইভাবে বেড়েছে ডলারের দামও। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। অথচ কোরবানির মসলা দুই তিন মাস আগে থেকেই মজুত করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

মসলার বাজারের ক্রেতা আমির ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই কোরবানির আগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য মসলার দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ তারা জানেই কোরবাড়িতে মসলা একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। কোরবানির গোশত খাওয়ার জন্য সবাইকে মসলা কিনতে হবেই। তারা সাধারণ জনগণকে এক প্রকার জিম্মি করে ব্যবসা করছে। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সরকারকে সিজনাল সময়গুলোয় চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখা উচিত। অথচ তারা করে উল্টো।

সাহেব বাজারের মসলা ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কিছু মসলার দাম বেড়েছে। মসলাকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এ পণ্য আমদানিতে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় মসলার বাজার চড়া। এ কারণে এলাচসহ সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। আমরা অল্প করে মসলা কিনে নিয়ে আসি এবং অল্প লাভে বিক্রি করি। দাম যা বাড়ে তা পাইকারি থেকে। আমাদের বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

সাহেব বাজারের মসলার পাইকারি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মসলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা ডলারসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে এখন দাম বাড়ছে।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, রাজশাহীর কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে জিরা ও এলাচ এবং ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালা থেকে লবঙ্গ ও দারচিনি আমদানি করা হয়। পূর্বে এসব দেশে উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দেয়া হলেও বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এ সমস্যায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে কোথাও কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুত করে কোনো সিন্ডিকেট করছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এ রকম অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদের নিয়মিত অভিযানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, মসলার বাজারে সিন্ডিকেট ঢুকেছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারকে এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। যেন কেউ সিন্ডিকেট করে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে।