Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:33 am

ঈদের পর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহার পর দুই কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে। এই দুদিনে দেশের পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এরপরও গত মার্চের তুলনায় ডিএসইর বাজার মূলধন কম এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

অব্যাহত দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। তবে ঈদের পর পুঁজিবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও তার আগে দুই মাসের বেশি সময় ধরে অব্যাহত দরপতন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা কমে যায়। ফলে হতাশা নিয়েই ঈদ উদযাপন করতে যেতে হয় বিনিয়োগকারীদের।

এ কারণে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি এখনও ফোটেনি। কারণ ঈদের আগে অব্যাহত দরপতন হওয়ায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বড় লোকসানে পড়েন। এখনও অনেক বিনিয়োগকারী কোনো কোনো শেয়ারে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ লোকসানে রয়েছেন।

কয়েকজন বিনিয়োগকারী বলেন, ঈদের আগে যে পরিমাণ লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে, সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে একটানা এক থেকে দেড় মাস পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকতে হবে। তারপরও অনেক বিনিয়োগকারীর লোকসান পুরোপুরি কাটবে না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় দিনে বাড়ে ৮২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ দুদিনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ১২৬ পয়েন্ট।

সূচকের বড় উত্থান হওয়ার পাশাপাশি দুই কার্যদিবসে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকায়। ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঈদের পর দুদিনে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

ঈদের পর ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বাড়লেও তার আগে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বাজার মূলধন কমে। গত ৩ মার্চ ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে ১২ জুন ডিএসইর বাজার মূলধন ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। অর্থাৎ দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা দরপতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ঈদের আগের শেষ দুই কার্যদিবসেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তাতে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৩ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঈদের আগে ও পরে মিলে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এরপরও ৩ মার্চের তুলনায় এখনও ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা কম।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল রেনাটা, লিন্ডে বিডি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও কোহিনূর কেমিক্যালসের শেয়ারের। এদিন সব খাতের শেয়ারে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। ইতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল পাট, প্রকৌশল, কাগজ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এই চার খাতে রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৭, ৫ দশমিক ২, ৪ দশমিক ৬ ও ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

অন্যদিকে, দেশের অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৭৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৪ হাজার ৫৪৭ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক গত সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে; আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৮ হাজার ৭৪৮ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ১২৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৭ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৯টির, কমেছে ৬৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির বাজারদর।

এদিকে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা। চলতি মাসের ২০ দিনে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৫০০টির বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশিদের বিও হিসাব কমেছে ৮০০টির বেশি। বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমার পাশাপাশি স্থানীয় তথা দেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও কমেছে। জুনে পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় আড়াই হাজার। তবে চলতি বছরের ছয় মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৫ হাজারের বেশি।