নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্যবিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের মাসে কমে গেছে রেমিট্যান্স। গত এপ্রিল মাসে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে এসেছে। এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। গত বছরের এপ্রিলে ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) এ অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার কম। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। একই সঙ্গে আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও রেমিট্যান্স কমেছে ৩২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আগের বছর ঈদুল ফিতরের সময়, অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি আট লাখ ডলার।
ঈদের সময় হঠাৎ রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সব সময় ঈদের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। এবারও মাসের প্রথম দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল। কিন্তু শেষ দিকে কমেছে। কেন রেমিট্যান্স কমল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে বলা হয়েছে। রেমিট্যান্স কি সার্বিকভাবে কমেছে, নাকি বিশেষ কোনো দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে, এটা দেখা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারব বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৯৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বরাবরের মতো ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আলোচিত সময় ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৪২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৮৩ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে সাত কোটি ৮১ লাখ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে সাত কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও সোনালী ব্যাংকে ছয় কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) ১০ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৭১ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে প্রায় ৪১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
এদিকে ডলার সংকট রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। সবশেষ গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ তিন হাজার ১০৬ কোটি ডলার (৩১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয়, তাহলে রিজার্ভ আরও সাত বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ রয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
