জাকারিয়া পলাশ: ঈদ উপলক্ষে ছোট-বড় সবার প্রায় সম্পূর্ণ ভাবনাজুড়ে থাকে ফ্যাশন। পছন্দের পোশাক আর আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিজের ঘরে আনতে সবাই ভীষণ চেষ্টা করেন। নতুন পোশাক ছাড়া যেন ঈদ-ই হয় না কারও। উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণিরা মানুষ বড় শপিংমলে ঘুরে কিংবা দেশের বাইরে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে রমজানজুড়ে। নিম্নবিত্তের ভরসা ফুটপাত বা অলিগলির নানা দোকানপাট।
ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক-প্রসাধনীর চাহিদায় জোয়ার আসে। সে সঙ্গে বাড়ে সরবরাহ। ফলে গতি আসে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও। চাকরিজীবীরা বোনাস পান। সেলুন থেকে শুরু করে বাস-লঞ্চ সেবা, এমনকি রিকশা ভাড়ায়ও বকশিশ বা বোনাসের প্রভাব পড়ে। মোট কথা, সবার আয় বাড়ে ঈদে। কিন্তু সঞ্চয় বাড়ে না কারও। কেননা আয়ের বিপরীতে বেড়ে যায় সামাজিক ব্যয়, উপহার-উপঢৌকনের চাপ। অর্থাৎ বেড়ে যায় ভোগ-ব্যয়।
ঈদের এ বাড়তি চাহিদা সামনে রেখে বিপণিবিতানগুলো নিয়ে আসে নানা রং-ঢঙের পোশাক-পরিচ্ছদ। এর মধ্যে রুচিশীল বা মানানসই পোশাকই থাকে বেশি। আবার নানা রকমের প্রলুব্ধকর ডিজাইন ও ফ্যাশনের উপস্থিতিও থাকে। বিভিন্ন বিদেশি সিরিয়াল কিংবা সিনেমার চরিত্র অনুকরণে পোশাক তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করেন অনেকে। গত কয়েক বছরে কিরণমালা, পাখি, বাহুবলী, নূরজাহান নামের পোশাক নিয়ে ঈদবাজারে হইচই লেগেছিল। এবার পদ¥াবতী ও সোফিয়ার কথা শোনা গেছে। রুচি ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা না করে ক্রেতারা ঝুঁকছেন এসব পোশাকের দিকে।
ঈদবাজারে ক্রেতার পছন্দের বিষয়ে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। এ বিষয়ে বাজারের নানা অফার, চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ না হয়ে নিজস্ব রুচি, মনন আর মান দেখার পরামর্শ দেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক আহসান হাবীব বলেন, ঈদ ইসলামধর্মীয় একটা অনুষ্ঠান। কিন্তু আমাদের দেশে ঈদকে কেন্দ্র করে যেসব পোশাক কেনাবেচা হয়, তা অন্য সংস্কৃতির অনুকরণে করা হচ্ছে। তাছাড়া বাঙালি সংস্কৃতির যে নিজস্ব ভিত্তি, তাতেও মোগল ও সুলতানি আমল থেকে ইসলামি ভাবধারার অনেক অনুষঙ্গ আছে। কিন্তু ঈদের পোশাকে এর প্রতিফলন অনেক ক্ষেত্রেই থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে ক্রেতাকে ঈদ ফ্যাশনে বিদেশি অনুকরণ এড়িয়ে শালীন ও রুচিশীল পোশাক খোঁজার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, চাহিদায় রুচিবোধ যুক্ত হলে বাজারের সরবরাহেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
পোশাক কেনার ক্ষেত্রে আরও কিছু নৈতিক দিকে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে ভোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। ইকো ওয়ারিয়র প্রিন্সেস নামের একটি ম্যাগাজিন পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রে পাঁচটি নৈতিক দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলোÑযে পোশাকটি আপনি কিনছেন, সেটি শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করে তৈরি হয়নি তো? আপনি যে দামে পোশাকটি কিনছেন, তার কতটুকু এর পেছনে নিয়োজিত শ্রমিকরা পেয়েছে? পোশাকটি তৈরির সময় শ্রমিকরা নিরাপদ পরিবেশে কাজের সুযোগ পেয়েছিল কী? পোশাকটি তৈরির ক্ষেত্রে কী পরিমাণ পরিবেশ দূষণ করা হয়েছে? পোশাকটির কাঁচামাল সংগ্রহ করতে কোনো পশুর ওপর নিষ্ঠুরতা করা হয়নি তো? প্রশ্নগুলো মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত পরিবেশবান্ধব, আরামদায়ক ও রুচিশীল পোশাকই ক্রেতার পছন্দ করা উচিত। অবশ্য আমাদের দেশের ক্রেতারা এমন প্রশ্ন নিয়ে সামান্যই ভাবেন।
ঈদবাজারে পোশাক কিনতে গিয়ে অনেক ক্রেতা প্রায়ই দিশাহারা হয়ে পড়েন। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন কোনটা নেবেন ভেবে। অনেকে শত শত দোকান ঘুরেও পছন্দের পোশাক কিনতে পারেন না। অনেকে দোকান থেকে যা কেনেন, ঘরে নিয়ে এসে হতাশ হন। এসব বিষয় মোকাবিলায় মাথায় রাখুন কিছু টিপস। বাজারের শত শত দোকান ঘুরবেন না। কয়েকটি দোকানের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করার চেষ্টা করুন। দোকানে হাজারটি ডিজাইন থাকবে। আপনার নিজস্ব একটা পছন্দ মাথায় রাখুন। সেটা স্পষ্টভাবে বলুন বিক্রেতার কাছে। কার জন্য কোন রঙের পোশাক কিনবেন, তা আগেই ঠিক করে রাখুন। বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটার চেষ্টা করুন। ঈদ পোশাকে পশু-পাখি কিংবা মানুষের ছবি, কার্টন থাকলে তা এড়িয়ে চলুন। কারণ সেগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে খাপ খায় না।
ঈদে ফ্যাশন ভাবনা
