গণপরিবহন বন্ধ

ঈদে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা রমরমা

শেখ আবু তালেব: চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন সোহাগ। আইটি খাতের একটি কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। এবার ঈদে মাইক্রোবাসে বগুড়া যেতে তাকে গুনতে হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। যেখানে বাস ভাড়া মাত্র ৩৫০ টাকা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে কেন বাড়ি যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সোহাগ বলেন, ‘মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী গ্রামেই থাকেন। যৌথ পরিবারের দেখভাল আমাকেই করতে হয়। বছরের এই সময়টাতে মা-বাবা দুজনই তাকিয়ে থাকেন পথ চেয়ে। বছরের অন্যান্য সময়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি যাওয়া হয় না। ঈদের সময়ের ছুটির পুরোটুকুই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কাটানো যায়। তাই বেশি ভাড়া দিলেও বাড়ি যেতেই হবে।’

কেবল সোহাগ নন, জীবিকার তাগিদে ঢাকায় অবস্থানকারী লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে নানা ঝক্কি-ঝামেলা সামলে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন। তেমন একজন সাকের হোসেন বাবলা। গতকাল ভোরের আলো ফোটার আগেই যাত্রাবাড়ী থেকে বরিশালের পথে রওনা দেন তিনি। পেশায় স্যানিটারি মালামাল সরবরাহকারী। হাতে ও কাঁধে দুটি ব্যাগ নিয়েই রওনা দিয়েছেন বাড়ির উদ্দেশে। যাবেন কীভাবেÑএমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘যে কোনো উপায়ে মাওয়া যাব। প্রাইভেটকারে যেতে লাগবে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। যেখানে বাস ভাড়া মাত্র ৭০ টাকা। ফেরি পার হলেও ওপারে মাইক্রো দাঁড়িয়ে আছে। জনপ্রতি ভাড়া নেবে দুই হাজার টাকা করে।’ তিনি আরও জানান, ‘স্বাভাবিক সময়ে মাওয়ার ওপার থেকে বরিশালের বাস ভাড়া ২০০ টাকা। মাইক্রো ভাড়া সাড়ে ৩০০ টাকা। কিন্তু লকডাউনের সময়ে ভাড়া নিচ্ছে দুই হাজার টাকা করে।’

ওষুধের ফার্মেসির ব্যবসায়ী মারুফও ঢাকায় থাকেন পরিবারসহ। ধানমন্ডি থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মাইক্রো ভাড়া করেছেন সাত হাজার টাকায়। তিনি জানান, এতটুকু পথ বাসেই যাওয়া হয়। বাসভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় যাওয়া যায়। কিন্তু এবার বাস নেই। বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে মাইক্রো ভাড়া করতে হয়েছে। আমাদের ওখানে যেতে মাইক্রো ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকার বেশি হয় না। কিন্তু এবার আড়াই হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে। পরিচিত বলে একটু কমে পেয়েছি। নইলে কেউ আট হাজার টাকার নিচে যেতে চায় না।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানে জাকিরের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। একটি মাইক্রোর সিট পেয়েছেন তিন হাজার টাকায়। তিনি জানালেন, অতিরিক্ত ভাড়া ও ভোগান্তি। পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করতে হবে। উপায় না পেয়ে তিন হাজার টাকা দিয়েই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।

বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা প্রিন্সিপাল অফিসার মারুফের গ্রামের বাড়ি রংপুরে; কর্মস্থল চট্টগ্রামে। তিনি জানান, গতকাল মাইক্রোতে কয়েকজন মিলে ঢাকা পর্যন্ত এসেছি। ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা। রংপুরে যাওয়ার জন্য মাইক্রো ভাড়া করেছি কয়েকজন মিলে ১৬ হাজার টাকায়। এতে আটজন যাওয়া যাবে। এ হিসাবে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি দুই হাজার টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এ পথের মাইক্রো ভাড়া ১০ হাজার টাকা।’

অনেকটা বাধ্য হয়েই এবারের ঈদে ঘরমুখো হচ্ছেন মানুষ। কেউ নাড়ির টানে,  কেউবা সংসারের অভিভাবক হওয়ায় যেতে হচ্ছে গ্রামের বাড়ি। ঘরমুখো এসব মানুষের যাতায়াতের গণপরিবহন এবার বন্ধ। তাই রেন্ট-এ কার তথা ভাড়া গাড়ির ব্যবসা চলছে রমরমা।

অধিক লাভের আশায় ২০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে প্রাইভেটকার, মাইক্রো ভাড়া দিচ্ছেন না রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীরা। আগে দেশের যে কোনো প্রান্তেই গাড়ি ভাড়া দিতেন তারা। ঢাকা থেকে উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড়ের সড়ক পথে দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগে গড়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। যেদিন যাওয়া হয়, মাইক্রো ফিরতে পারে পরের দিন। তৃতীয় দিনে আবার নুতন ট্রিপ নিতে পারে।

গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরের যাত্রা বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে ঢাকা রেন্ট-এ কারের স্বত্বাধিকারী রাজিব হাসান জানান, ‘রংপুরে মাইক্রো ভাড়া পড়বে হায়েস গাড়ির বেলায় ১৮ হাজার টাকা। প্রাইভেটকার ভাড়া পড়বে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু এখন এতদূরে গাড়ি দিচ্ছি না। যেতে-আসতে সময় বেশি লাগে। এখন শুধু ঢাকার আশপাশে এক থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভাড়া দিচ্ছি।’

জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে রংপুরে যেতে একটি মাইক্রোবাসের ভাড়া ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। এখন সাত থেকে আট হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে। একই অবস্থা ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর ভাড়ার ক্ষেত্রেও। স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চেয়েও গাড়ি ভাড়া পাননি অনেকে।

অনলাইনে গাড়ি ভাড়া দেয়া প্রতিষ্ঠান জুম রেন্ট-এ কারের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়, ‘আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা সব গাড়িই ভাড়া হয়ে গেছে। ১১ থেকে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত কোনো গাড়ি দেয়া সম্ভব নয়।’

ঈদ মানেই আপনজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি। কর্মের টানে ঢাকায় থাকা মানুষ ঈদ-উদযাপন করতে নিজ গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু এবার করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গত ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরনের গণপরিবহন। পরে গত ৬ মে থেকে শুধু আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু এখনও বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। আকাশ পথে কক্সবাজার রুট ছাড়া সব রুটে যাত্রী পরিবহন করছে সরকারি-বেসরকারি এয়ার লাইনস প্রতিষ্ঠান। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে ঘরে ফিরছে মানুষ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০