ঈদ উপলক্ষে ডিজিটাল লেনদেনে ব্যাপক সাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক খাতে ডিজিটাল লেনদেনের অগ্রগতি দিন দিন বেড়ে চলছে। তবে ঈদকেন্দ্রিক এ লেনদেনে ব্যাপক সাড়া মিলছে। গত তিন দিনেই এটিএম, পিওএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং বাংলা কিউআর ব্যবহার করে মানুষ ২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নগদ টাকা বহনে বাড়তি ঝামেলা থাকে। আছে জাল নোটের ঝক্কি। আবার ছিনতাইয়ের ভয় তো আছেই। আর কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা হারিয়ে যাওয়া বা ছিনতাইয়ের ভয় নেই। বিক্রেতাকে টাকা গুনে দেয়ার ঝামেলাও নেই। লেনদেনে সময়ও লাগে কম। তাই দিন দিন ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে। এছাড়া ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার থাকে। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ডিজিটাল লেনদেনের ব্যাপক সাড়া দেখা যায়।

বসুন্ধারা শপিংমলে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন, সুযোগ থাকলেই ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্ট করার চেষ্টা করি। ঈদকেন্দ্রক বেশি কেনাকাটা হয়। এর জন্য অনেক ক্যাশ টাকা বহন করতে হয়। ক্যাশ টাকা বহন করা এই সময়ে একটু রিস্কি। তাই ঈদের সময় ডিজিটাল পেমেন্টকে বেছে নিয়েছি। এছাড়া এ সময় কেনাকাটায় বিভিন্ন অফারও পাওয়া যায়।

রাজধানীর ফ্যাশন হাউসগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ রয়েছে অনেক দিন ধরেই; ঈদের বাজারে এসে ক্রেতাদের একটি বড় অংশ নগদ টাকার বদলে দাম চুকাচ্ছেন কার্ডে বা এমএফএসের মাধ্যমে।

ফ্যাশন হাউসগুলো বলছে, তাদের আউটলেটগুলোতে ঈদের সময় মোট লেনদেনের ‘৫০ থেকে ৭০ শতাংশই’ হয়েছে ডিজিটাল লেনদেন। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ফ্যাশন হাউসগুলো।

নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করছেন মতিঝিল এলকার ব্যাংক কর্মকর্তা শওকত হোসাইন। ঈদ উপলক্ষে বসুন্ধারা শপিংমলে কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি জানান, জামা-জুতাসহ অন্যান্য পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নগদ টাকার চেয়ে কার্ডে পে করাই সুবিধাজনক। আবার ডিজিটাল পেমেন্টে কিছু না কিছু অফার থাকে। সে কারণে সুপার শপগুলোতে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও আমি নিয়মিত বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্টের সাহায্য নিই। এখন চায়ের দোকান ও কাঁচাবাজারেই নগদ টাকার লেনদেন বেশি।

জানা যায়, গত ২৮ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত এটিএম ব্যবহার কার্ডের মাধ্যমে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৭২টি লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৬২ কোটি ১২ লাখ ১১ হাজার ১২৪ টাকা। একই সময়ে পিওএস মেশিনে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৩৪টি লেনদেন হয়। এসব লেনদেনে অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৯ টাকা। এ সময় ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৪ লাখ ২৭১টি লেনদেন হয়। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ৬৮ লাখ ৯২ হাজার ২০১ টাকা। এছাড়া বাংলা কিউআরের ৩৩ হাজার ৫১২টি লেনদেন হয়েছে। এতে অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।

ডিজিটাল লেনদের সার্বিক অগ্রগতির পরিসংখ্যান: ব্যক্তি পর্যায়ে ডিজিটাল পরিশোধের সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)। গত জানুয়ারি মাসে এ মাধ্যমে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বর্তমানে ২১ কোটি ৯১ লাখের বেশি এমএফএস হিসাব রয়েছে। ডিজিটাল পরিশোধের আরেক অনুষঙ্গ ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক রয়েছে ৮৪ লাখের মতো। ইন্টারনেট ব্যাংকিং থেকে জানুয়ারি মাসে ৯৬ হাজার ২০৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে। সারাদেশে এখন ১৩ হাজারের মতো এটিএম বুথ, এক লাখের বেশি পয়েন্ট অব সেলস, ২০০শ মতো ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন এবং ৪ হাজারের বেশি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন রয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ৪ কোটি ২৯ লাখের বেশি কার্ড ইস্যু করেছে। কার্ড ব্যবহার করে গত জানুয়ারিতে প্রায় ৪৬ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আমাদের আগামীর ভিশন ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেনের অগ্রগতি বাড়ছে। কারণ ডিজিটাল লেনদেনে নগদ টাকার যে ঝামেলা তা বহন করতে হয় না। আবার লেনদেনেও খুবই সাশ্রয়ী। তাই মানুষের ডিজিটাল লেনদেনের আগ্রহ বাড়ছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০