নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদকে সামনে রেখে সালাদ তৈরির সবজির দাম শতকের ঘর পেরিয়েছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, গাজর, শসা। যদিও টমেটো-গাজর আগেই শতক ছুঁয়েছে। এবার শতকের ঘর পার করেছে শসা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক লাফে শসার দাম ৪০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, টমেটো-গাজর এই সিজনের সবজি না হওয়ায় এগুলোর দাম বাড়তি। আর শসার চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ঈদে সালাদের সবজির চাহিদা বেশি থাকে বলে আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম এখনও শতকের ঘরে না পৌঁছালেও রয়েছে কাছাকাছি অবস্থানে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ টাকা বেড়ে আজকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। একইসঙ্গে ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে আদারও। সপ্তাহ ঘুরতেই কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ভারতীয় আদার দাম হয়েছে ২৮০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাঁঠালবাগান, তালতলা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র।
বাজারে কয়েকটি ছাড়া সব সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। দাম বেড়েছে শসা, বরবটি, লম্বা বেগুন, কাঁকরোল ও লাউয়ের। এসব সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহে এক লাফে শসা ও বরবটির দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা করে। গত সপ্তাহে শসা ও বরবটির দাম ছিল যথাক্রমে ৮০ ও ৬০ টাকা। আর কাঁকরোল ও লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ টাকা ও ১০ টাকা।
বাজারে টমেটো ১০০, দেশি গাজর ৯০, চায়না গাজর ১২০, লম্বা বেগুন ৮০, সাদা গোল বেগুন ৭০, কালো গোল বেগুন ৭০, শসা ১২০, উচ্ছে ৬০, করলা ৬০, কাঁকরোল ৮০-১০০, পেঁপে ৫০, ঢেঁড়স ৬০, পটোল ৫০-৮০, চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দল ৫০, ঝিঙা ৬০, বরবটি ১০০, কচুর লতি ৮০, মুখিকচু ১২০, মিষ্টি কুমড়া ৩০, শজনে ১২০, কাঁচামরিচ ২০০, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০, চাল কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা করে।
সালাদের সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে দোকানি আবু কালাম বলেন, ‘টমেটো ও গাজর শীতকালীন সবজি। এগুলোর এখন সিজন না, তাই দাম বাড়তি। আর শসার চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। ঈদ আসছে বলে বেড়েছে এমনটা না।’
বাজার করতে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘টমেটো-গাজর শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। শসার দামও বাড়ল; আসলে ঈদে সালাদের চাহিদা বেশি থাকে, তাই ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিজন হচ্ছে একটা উছিলা। শসার তো এখন সিজন চলে, তাহলে দাম বাড়ল কেন?’
এদিকে সবজির অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ ও আদার দাম। বাজারে মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮০, দেশি পেঁয়াজ ৯০, লাল আলু ৬০, সাদা আলু ৬০, বগুড়ার আলু ৭০, নতুন দেশি রসুন ২২০, চায়না রসুন ২২০-২৩০, চায়না আদা ২৬০, ভারতীয় আদা ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানেই দেশি পেঁয়াজের দাম ৫, লাল আলুর দাম ৫ আর ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে।
ঈদ আসছে বলে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে কিনাÑজানতে চাইলে বিক্রেতা শরীফ বলেন, এগুলোর দাম তো আগে থেকে বাড়তি ছিল। ঈদ উপলক্ষে বাড়ছে এমন না।
বাজেটে আলু-পেঁয়াজের দামের ওপর প্রভাব পড়া নিয়ে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, বাজেটে যখন কোনো কিছুর দাম কমার কথা বলে, সেটি শুরু হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু যেসব জিনিসের দাম বাড়বে বলে সেগুলো পরের দিনই বেড়ে যায়।
এছাড়া বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী, ১৯০০-২২০০, রুই ৩৬০-৫৫০, কাতল ৪০০-৪৫০, কালিবাউশ ৪৫০-৫০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০-১৪০০, কাচকি ৫০০, কৈ ২৬০-৩০০, পাবদা ৫০০-৬০০, শিং ৪৫০-৬০০, টেংরা ৬০০-৭০০, বেলে ৬০০-১৩০০, বোয়াল ৭০০-১০০০, রূপচাঁদা মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম আরও কমে এসেছে। একইসঙ্গে কমেছে কক মুরগি ও লেয়ার মুরগির দাম। আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৭৮-১৯০, কক মুরগি ২৮৩-২৯৫, লেয়ার মুরগি ৩৪০, দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, আজকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৫ থেকে ৭ টাকা। লেয়ারের কমেছে ৫ ও ককের কমেছে ২২ থেকে ৩৫ টাকা।
বিক্রেতা শাহজাহান বলেন, মুরগির দাম আরও কমে যাবে। ব্রয়লার মুরগির দাম কয়েক দিনের মধ্যেই ১৬০ টাকায় নেমে আসবে।
অন্যদিকে, মুরগির দাম কমলেও গরুর মাংস ও ডিমের বেশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,১৫০ টাকা কেজি দরে। মুরগির লাল ডিম ১৫০ এবং সাদা ডিম ১৪৫ টাকায় ডজন বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাদা ডিমে ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে।
এদিকে প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৪০, ছোট মসুর ডাল ১৩৫, মোটা মসুর ডাল ১১০, বড় মুগ ডাল ১৬০, ছোট মুগ ডাল ১৮০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১১৫, ডাবলি ৮০, ছোলা ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০, খোলা ঘি ১২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫, খোলা চিনি ১৩০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।