Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:37 pm

উইমেন এসএমই এক্সপো ছুটির দিনেও ক্রেতাশূন্য

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ১১তম ইন্টারন্যাশনাল উইমেন এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ ২০১৭ শুরু হয়েছে চলতি মাসের ২ তারিখে। চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা শেষের দিকে পৌঁছে গেলেও জমাতে পারেনি নারী উদ্যোক্তারা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও ক্রেতাশূন্য দেখা যায় এ মেলা।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ক্রেতাশূন্য পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। একাধিক বিক্রয়কর্মী ও নারী উদ্যোক্তারা জানান, সকাল থেকে দুপুরের শেষ অবধি কোনো ক্রেতা আসে না বললে চলে। বিকাল থেকে সন্ধ্যার দিকে গুটিকয়েক ক্রেতা দেখা যায়। এতে করে খরচ উঠবে কি না, সন্দেহ আছে। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে মেলা করেছে, সেটা পূরণ হবে না।

চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড বিক্রয় প্রদর্শনী খুলেছে এ বাণিজ্য মেলায়। প্রায় ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য রেখেছে তাদের স্টলে। এ মেলা উপলক্ষে তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা এমনটি জানালেন মার্কেটিং অফিসার মো. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেলা এখন প্রায় শেষের দিকে। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। খরচও তুলতে পারব কি না, জানি না। তবে মেলায় পণ্য বিক্রি থেকে প্রদর্শনীকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু দর্শনার্থী বা ক্রেতা না এলে আমাদের উদ্দেশ্য তো সফল হবে না। ক্রেতা না আসার কারণ হিসেবে উইম্যান চেম্বারের প্রচারের সীমাবদ্ধতার কথা তিনি উল্লেখ করেন। আয়োজকদের উচিত মেলার সময় বৃদ্ধি করা। না হলে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

অন্যদিকে ফরেন জোন পুরোটাই খালি পড়ে আছে। অন্যান্য বছর বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্যোক্তারা আসলেও এ বছর আসেনি। শুধু বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার যৌথ একটি স্টল আছে। এছাড়া ইরানের কিছু পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের মিজানুর রহমান একটি স্টল দিয়েছে। মিজানুর রহমান জানান, বিদেশি ব্যবসায়ীরা না আসাতে এ জোনটা খালি। তাই মেলা চলতি মাসের ২ তারিখে শুরু হলেও পণ্য প্রদর্শন শুরু করেছি গত শনিবার। তাছাড়া পুরো জোনটা খালি থাকায় এদিকে মানুষ আসে না। মনে হয় না স্টাফদের বেতনের টাকা তুলতে পারব। মেলায় তিনি আট লাখ টাকা মূলধন খাটিয়েছেন।

বিদেশি ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশগ্রহণ না করার করণ জানতে চাইলে উইম্যান চেম্বারের সিইও জিএ রায়হান বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের কেউ ভিসা পাননি। পাকিস্তান থেকে ৩৭ জন ভিসার জন্য আবেদন করেছিল। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চীন, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ মেলায় অংশগ্রহণ করেনি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।

ভারতে প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিমালয়া ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ঢাকা থেকে এসে একটা প্রদর্শনী সেন্টার খুলেছে। কথা হয় এ প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্র্যান্ড ম্যানেজার ফয়সাল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, ২৫টি আলাদা পণ্য নিয়ে তারা এ প্রদর্শনী সেন্টার করেছে। এর মধ্যে কিছু নতুন আইটেমও আছে, যেটা মেলার মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পরিচয় করতে চায় তারা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মানুষ কম আসাতে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না।

মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবিদা সুলতানার সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য দেশে পিছিয়ে পড়া নারী উদ্যোক্তাদের এ মেলার মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসা। এবার প্রায় ১০টি জেলা থেকে প্রায় ১০০ জন নারী উদ্যোক্তার তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। আর নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বনি¤œ ভাড়ায় স্টল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ১৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৪১ টাকা মূল্যের স্টল রয়েছে। ৩৫০টি স্টলের প্রায় সব ভাড়া হয়েছে আর খালি থাকতে পারে ১০ থেকে ১৫টি স্টল। মেলা আয়োজনে উইম্যান চেম্বারে খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকার মতো। কোনো কোনোবার মেলা থেকে আয় হয় আবার কোনোবার হয় না। আমাদের বেশি খরচ পড়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে। সাময়িক এ সংযোগের জন্য দ্বিগুণ টাকা ইউনিটপ্রতি গুনতে হয়। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। তাছাড়া মেলার সময় বৃদ্ধি করলে রেলওয়েকে প্রতিদিন ২৮ হাজার ১২৫ টাকা দিতে হবে। সরকারে উচিত বিভিন্ন দিক দিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা।

এসএমই মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থী কম আসার কারণ হিসেবে বাচ্চাদের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেন তিনি। চলতি পরীক্ষার করণে মায়েরা আসতে পারছেন না।