বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক, ৭ বছর মেয়াদি মাধ্যমিক এর মধ্যে ৩ বছর মেয়াদি জুনিয়র, ২ বছর মেয়াদি মাধ্যমিক এবং ২ বছর মেয়াদি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা ৩-৫ বছর মেয়াদি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ৫২টি পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা বা ইংরেজির মধ্যে যেকোনোটিকে বেছে নিতে পারে। প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে যদিও ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয় থাকে কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক হতে পরবর্তী ধাপে আর থাকে না। বর্তমানে ১০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষা দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক আছে, যা যথাস্থানে রাখার বিকল্প নেই। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে ইসলামি শিক্ষা বিদায়ের পথে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। উচ্চ মাধ্যমিকে ইসলামি শিক্ষাকে শুধু মানবিক বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট করা এবং চতুর্থ বিষয় করার কারণে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। মানবিক বিভাগের গুটিকয়েক ছাত্র-ছাত্রী এ বিষয়টি পড়ছে। কিন্তু আমরা জানি, প্রতিটি শিক্ষার্থীর বয়ঃসন্ধিকাল এবং যুবক-যুবতী বয়সে শিক্ষার্থীরা মনের আবেগে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না থাকায় তরুণ প্রজš§ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় বেলায় র্যাগ ডে’র নামে অশ্লীলতা প্রদর্শন করছে এবং শিক্ষা ক্যাম্পাসেও আজকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখতে হয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের হাতে খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, মাদকদ্রব্য সেবন। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর আত্মহত্যা, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাবা মাকে খুন প্রভৃতি অপরাধ। এসব অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দু-চার দিন খবরে দেখিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে। এরপর সব শেষ। কিন্তু এসবের মূলে কি নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। উত্তাল রক্তের কিশোর-কিশোরীদের জীবনের টানাপড়েনের মুহূর্তে, ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বে, নীতি-নৈতিকতার যুক্তিতে যেই বিষয়টা তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই মুহূর্তে সেই ঐশী বিষয়টা থেকেই তারা বঞ্চিত। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। সাধারণত প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়ানোর মাধ্যমে, বিভিন্ন বৈষয়িক সাবজেক্টের পাঠ্যসূচিতে নৈতিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট পাঠগুলো অন্তর্ভুক্ত করে, মনীষীদের জীবনী পড়ানোর মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান সম্ভব। তবে ইসলামি শিক্ষা তার চেয়ে বহু গুণ বেশি ফলপ্রসূ। ইসলামি শিক্ষার বহুবিধ কল্যাণের মধ্যে একটি হচ্ছে, এ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে। তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা অর্জিত হলে মানুষ সর্বদা সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করে। তাই নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক প্রয়োজন সব স্তরে শিক্ষার।
জান্নাতুল নাঈম স্বর্ণা
শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
জয়নাল হাজারী কলেজ, ফেনী