নিজস্ব প্রতিবেদক: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় অংশগ্রহণ করে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন। শতাংশের হিসাবে এটি ৬৮ দশমিক ৯১। বাকি পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৪ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। গত ১০ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে এটি সর্বনিম্ন।
সর্বশেষ ২০০৭ সালে এ বছরের চেয়ে কম শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সেবার পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। পরবর্তী ৯ বছর এইচএসসি ও সমমানের পাসের হার ক্রমান্বয়ে বাড়লেও এ-বছর তা কমে গেছে। এছাড়া গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীও এবার কমেছে ২০ হাজার ৩০৭ জন।
১০ বছরের এইচএসসির ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০০৮ সালে তা বেড়ে ৭৬ শতাংশ হলেও পরের বছর পাসের হার কিছুটা কমে ৭২ শতাংশে দাঁড়ায়। পরবর্তী তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৪ সালে পাসের হার হয় ৭৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে একটু কমে ৬৯ শতাংশ হলেও পরের বছরই আবার পাসের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের মতো কম পাসের হার গত ১০ বছরেও হয়নি।
গতকাল রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ ফলের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করায় এবার ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হয়েছে।’
এবারের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু পাসের হার কিংবা জিপিএ-৫ই নয়, শতভাগ পাস ও শূন্যসংখ্যক পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সব সূচকেই অবনতি হয়েছে।
ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করাকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এবার পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম পাস করেছে। পাস কম করায় আমরা বিস্মিত হইনি। পরীক্ষার খাতা নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করার কারণেই এমন ফল হয়েছে।’
গত মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষাতেও উত্তরপত্র মূল্যায়নের এ পদ্ধতি ব্যবহার করার উদহারণ তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবারের এসএসসিতেও গতবারের চেয়ে আট শতাংশ কম পাস করেছে; সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এইচএসসিতে কম খারাপ হয়েছে। এটা আমাদের সাফল্য।’
উত্তরপত্র মূল্যায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘উত্তরপত্র মূল্যায়নের লক্ষ্যে আমরা একটি কমিটি করেছি, যে কমিটির অধীনে উত্তরপত্র বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমে আমরা প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং পরবর্তীতে তারা অন্য পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।’
এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের গড় হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এখানেও পাসের হার কমেছে। সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭০ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে মাদরাসা ও কারিগরিতেও গতবারের চেয়ে ফল খারাপ হয়েছে। মাদরাসা বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক দুই শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে এ বোর্ডে পাসের হার কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৮১৫ জন। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৬৬৯ জন।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের মতো এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় এ ফল বিপর্যয়ের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এ ফল হিসাব করা হবে বলে অনেক শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে পড়ছে। আর আশানুরূপ ফল লাভ করতে না পারায় অভিভাবকরাও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
রাজধানীর উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কাক্সিক্ষত জিপিএ-৫ না পাওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ছেলের ফল খারাপ হওয়ায় খুব চিন্তা লাগছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এ ফলের কারণে হয়তো পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের বেশি ক্ষতি হয়ে গেল। তাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে।’
কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, নতুন এ মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে সামগ্রিকভাবে ভালোই হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন আর গাইড বই কিংবা নির্বাচিত সাজেশনের পেছনে ছুটবে না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও ভালো পাঠদান এবং শিক্ষাসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে পাসের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
Add Comment