উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষপ্রান্তিকে উচ্চশিক্ষায় বেকারের হার ১১ দশমিক দুই শতাংশ। এক বছর আগে এ হার ছিল ১০ দশমিক দুই শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এমন উপাত্ত উঠে এসেছে। আজ প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। বিবিএসের শিল্প ও শ্রম শাখা শ্রমশক্তি জরিপটি পরিচালনা করেছে।

শ্রমশক্তি জরিপ থেকে জানা যায়, সারা দেশে কাজ করতে ইচ্ছুক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সার্বিক বেকারের হার চার দশমিক দুই শতাংশ; সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষ করাদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশের ওপরে। অথচ শারীরিকভাবে তারাই বেশি কর্মক্ষম। ২৯ এর নিচে।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, চাকরিদাতা চাহিদা অনুপাতে কর্মী পাচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে এখন যে ধরনের চাকরি রয়েছে, সেখানে যাওয়ার মতো যোগ্যতা নেই শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে বেকার তরুণরা যে ধরনের ও যে বেতনের চাকরিপ্রত্যাশা করেÑসেটা তারা পাচ্ছে না। দুই প্রত্যাশার মধ্যে মিল না থাকায় দেশের বেকারের হার বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিক্ষিত মানুষের চাকরির সুযোগ আছে। সেটি অফুরন্ত। কিন্তু বাজারে যে ধরনের দক্ষ মানুষের চাহিদা রয়েছে, শিক্ষিতদের মধ্যে অনেকে সে চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। ফলে বিদেশ থেকে এনে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে দেশে শিক্ষিতদের অনেকে বেকার থাকছে।

উচ্চশিক্ষায় বেকার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিডার) নির্বাহী চেয়ারম্যান রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, তিন কারণে দেশে উচ্চশিক্ষায় বেকারের হার বাড়ছে। প্রথমত, এখনকার কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তাই যারা চাকরিদাতা, তারা প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক চান। দ্বিতীয়ত, নিয়োগকারী যে ধরনের শিক্ষা ও শিক্ষার গুণগত মান চান, সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয়ত, চাকরিপ্রত্যাশীর প্রত্যাশা অনুপাতে কাজ পাচ্ছেন না। এসব কারণে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ছে। তিনি বলেন, তরুণ সমাজের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে আত্মকর্মসংস্থানের দিকে নজর দেওয়া।

তবে শুধু উচ্চশিক্ষিতই নয়, দেশে সার্বিকভাবে বেকারের হার বাড়ছে। গত এক বছরে বেকার বেড়েছে এক লাখ। বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে এখন বেকারের হার বেড়ে ২৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগেও দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এরমধ্যে পুরুষ বেকার ১৪ লাখ। নারী বেকার ১৩ লাখ। বেকারের সংজ্ঞা হিসেবে বিবিএস বলছে, সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টাও কাজ যারা করেনি, তাদের বেকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড অনুযায়ী এ সংজ্ঞা নির্ণয় করা হয়েছে।

শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের মধ্যে বেকারের হার বেড়ে যাওয়া এবং সার্বিক বেকারের হার বাড়লেও শালীন কাজের হার কিছুটা বেড়েছে গত এক বছরে। তাতে দেখা গেছে, গত বছর অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিল ৮৫ দশমিক চার শতাংশ মানুষ। সেটি কমে এসেছে ৮৪ দশমিক ছয় শতাংশ মানুষ। এটিকে ইতিবাচক দেখছে বিবিএস।

শ্রমশক্তি জরিপে আরও দেখা গেছে, বাসাবাড়িতে পুরুষের চেয়ে নারী তিন গুণের বেশি কাজ করে। একজন পুরুষ সপ্তাহে বাসায় কাজে সময় ব্যয় করেন ৯ ঘণ্টা। আর নারী করেন ২৫ ঘণ্টা। এ কাজের মধ্যে রয়েছে রান্না-বান্না, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার ও বাচ্চাদের সময় দেওয়া। জরিপে দেখা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে এখন বেকারের হার ছয় দশমিক চার শতাংশ। গত বছর তা ছিল ছয় দশমিক দুই শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে শ্রমবাজারে ঢুকতে পারছে না অনেকে। এ হারও বাড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেনি এমন বেকার আছে মাত্র এক দশমিক পাঁচ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বলছে, প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে সাত দশমিক ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সে আলোকে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তাহলে এ প্রবৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন অর্থনীতিবিদদের।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে কারিগরি জ্ঞানের অভাব থাকায় তারা চাকরি পাচ্ছেন না। এ কারণেই বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। এদের বেকার থাকার আরেকটি কারণ হলো, সমাজে যে ধরনের কাজ পাওয়া যায়, উচ্চশিক্ষিতরা সে ধরনের কাজ করতে আগ্রহী নন। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরির ক্ষেত্রও কম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০