সভ্যতার প্রধানতম অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ব্যতীত আধুনিক সভ্যতা কল্পনা করার কোনো সুযোগ নেই। শিল্পোৎপাদন, বিলাসী জীবানযাপন, প্রাত্যহিক নানা প্রয়োজন মেটানো প্রভৃতি নানা কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য। সে কারণে সব দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশও এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে এ খাতে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে মানুষের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে গিয়ে।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কেনার দায়: ১২ বছরে পিডিবির ভর্তুকি ৭৬,২৮৭ কোটি টাকা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে যে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় প্রতি বছর ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি পূরণে কয়েক বছর পিডিবিকে ঋণ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকায় তা ইকুইটিতে রূপান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে পিডিবি। যদিও বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি।
এ কথা সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেশের সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জনগণের করের অর্থে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয়া হয়, তাও পরিশোধ হয় জনগণের অর্থেই। কাজেই জনগণের করের অর্থ কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করা হচ্ছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিদ্যুৎ অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কিন্তু সেই প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে যথেচ্ছভাবে অর্থ ব্যয় করা কাম্য হতে পারে না।
এ কথা সত্য যে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছিল। আর তখন সরকারের যেহেতু পর্যাপ্ত সক্ষমতা ছিল না, তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ ছাড় দিয়ে দায় মুক্তি আইন পাস করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এ খাতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। অনেকগুলো ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সে সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে বাড়তি বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। মূলত ভাড়াভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই পিডিবিকে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। আর সে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয় ভর্তুকি মূল্যে। যে কারণে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে সিস্টেম লস কমানোসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় দক্ষতা বাড়ানো আবশ্যক। সেটা না করা গেলে ভর্তুকির বোঝা বাড়তেই থাকবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি করি সংশ্লিষ্ট মহল বিষয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।