Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:56 pm

উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই লাখেরও বেশি প্রবাসী দেশে ফিরেছেন গত বছর। তারপরও প্রবাসী আয়ের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। এত রেমিট্যান্স আসছে কোথা থেকে, কেন আসছে, কীভাবে আসছে এবং ভবিষ্যতে আরও কতদিন আসবে এসব প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কেউ বলছেন প্রবাসীরা শেষ সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরছেন আবার কেউ সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনাকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক সেটা খুঁজে দেখার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

গবেষণা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফিলিপাইনের প্রবাহ কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগৃহীত রেমিট্যান্সের পরিমাণ দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অন্যদিকে শুধু ছয় মাসের ব্যবধানে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজের (এনআরবি) চেয়ারপারসন এমএস শেকিল চৌধুরী বলেন, একটি সময় হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি অর্থ দেশে আসত। কিন্তু সেটাও এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। আবার প্রবাসীরা প্রতি বছর দুই থেকে একবার দেশে আসার সময় অনেক নগদ টাকা বয়ে আনত। এখন সেটারও প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে ভারি লেনদেন করতেন, তাদের মধ্যেও বৈধ পথে টাকা লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে।

সিপিডি জানায়, কভিড-১৯ অতিমারির ধাক্কায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি পর্যুদস্ত। কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিপুলসংখ্যক তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সবাই শঙ্কিত ছিলেন এবং এ কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করে চলেছে। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা যেমন আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, ঠিক একইভাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। এই অর্থের উৎস নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি মানে প্রবাসীরা ভালো আছেন এটা ভাবা উচিত নয়। যেসব প্রবাসী ইতোমধ্যে কাজ হারিয়ে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক সংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, প্রবাসী আয় এর ওপর সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনা যদি আরও কিছুটা বাড়ানো যায়, তবে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে। এরকম প্রণোদনা যদি আমরা পোশাক খাতের জন্য করতে পারি তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারব। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে। কার্যক্রমটি পরিচালিত হবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু ব্যাংকটির যথেষ্ট লোকবল এবং অবকাঠামোর অভাবে টাকাগুলো এ মুহূর্তে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফিরে আসা বাংলাদেশিদের কাজে লাগাতে মাত্র চার শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন এই ঋণের ব্যবস্থা করছে সরকার।

সমাপনী বক্তব্যে দেবপ্রিয় বলেন, পরিশ্রমী এসব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ কর্মসংস্থানের ওপর ভিত্তি করেই বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জন নির্ভর করছে। অনেকেই বলছেন রেমিট্যান্সের প্রবাহ ২০২১ সালে শেষ পর্যন্ত চলতে পারে আবার কারও কারও মতে দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকবে এই প্রবৃদ্ধি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা বিতরণের যে কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। নানা অসুবিধার কারণে প্রবাসীদের কাছে টাকা পৌঁছাতে পারছে না তারা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্য কোনো শিডিউল ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে না। খেটে খাওয়া এসব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য যে কোনোভাবে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।