Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:10 pm

উড়োজাহাজ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে পদক্ষেপ নিন

বৈশ্বিক মহামারি কভিডের সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদেরও আকাশপথে অনেক দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরিস্থিতিরি উন্নতি হওয়ায় উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হওয়ার পর ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি নতুন কর্মীও যাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটে যাত্রীর বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের চাপ ব্যাপক বেড়ে যায়। এই সুযোগে উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। তাতেও মন ভরছিল না সুযোগসন্ধানীদের। টিকিটের আকাল দেখিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। অনলাইনে টিকিট না পাওয়া গেলেও বেশি দাম দিলে টিকিট পাওয়া যায়, অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন বিদেশগামীরা। কিন্তু যেখানে টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়ায় ‘ম্যানুয়াল’ কোনো বিষয় নেই, সবই কম্পিউটারাইজড; সেখানে অনিয়ম-কারসাজি হলে প্রমাণ থাকার কথা। অথচ তা উদ্ঘাটন করা যাচ্ছিল না।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজের টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে অসাধু চক্রের কারসাজি রয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। তাতে বলা হয়, বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ট্রাভেল এজেন্সির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্র ‘গ্রুপ টিকিট বুকিং’-এর মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। ফলে অনেক প্রবাসী শ্রমিক কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো এয়ারলাইনস যখন কোনো গ্রুপ টিকিট বিক্রি করে, তখন তার সিস্টেমে ওই টিকিট বিক্রীত বলে দেখানো হয়। গ্রুপ বুকিংয়ে সাধারণত নিন্ম ধাপের বা সর্বনিন্ম দামের টিকিট বিক্রি করা হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সিস্টেমে যখন টিকিট কিনতে সার্ভারে প্রবেশ করেন, তখন অল্পসংখ্যক উচ্চ মূল্যের টিকিট প্রদর্শিত হয়। উচ্চ মূল্যের টিকিট বিক্রি শেষ হলে অসাধু ট্রাভেল এজেন্টরা তাদের গ্রুপ টিকিট উচ্চ দামের টিকিটে সমদামে বা আরও বেশি দামে বিক্রি করেন। অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিদেশগামীরা। কারসাজি প্রক্রিয়া সামনে আসায়, দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সহজ হবে।

সরকার দোষীদের খুঁজে বের করে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা, ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অবশ্য আটাব মহাসচিব বলেছেন, ‘কোনো ট্রাভেল এজেন্সি সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তার দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সির। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে।’ কিন্তু বিষয়টি আদৌ সহজ নয়। সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও অনেক সময় সংগঠনের চাপে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তারা টিকিট বিক্রির বন্ধের হুমকিও দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত হবে, আইন প্রয়োগ কঠোর হওয়া। বাংলাদেশ বিমানকে বলে দেয়া হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ভাড়া ৬৫ হাজারের বেশি নেয়া যাবে না। একই ধরনের নির্দেশনা দিতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সরকার উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, তা যথারীতি পরিপালিত হচ্ছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।