প্রতিনিধি, বাকৃবি: এবারের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন দেলোয়ার হোসেন সুজাত। কিন্তু ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল ছিল ২০৭৩৩। তিনি বলেন, ‘আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান দেখে উত্তর যাচাই করে দেখেছি যে আমি ৭৫ নম্বর পাব। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখি যে আমার অপেক্ষমাণ তালিকায় অবস্থান ৫২৯১তম। আমি যে নম্বর আশা করেছি সেটির কাছাকাছি থাকলেও মেধা তালিকায় আমার পজিশন আসার কথা। সেখানে অনেক পেছনে আমার অবস্থান।
একই ধরনের অভিযোগ ফারজানা করিম রিচি নামের আরেক ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থীর। তিনি জানান, ‘আমার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বাকৃবিতে। আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্ন বিভিন্ন স্বনামধন্য কোচিং প্রতিষ্ঠানের সমাধানের সঙ্গে যাচাই করে দেখেছি, আমি ৬৫ নম্বর পাব। সেটি হলে আমার মেধা তালিকায় অবস্থান হওয়ার কথা। ফলাফল প্রকাশের পর দেখি আমার রোলের পাশে ‘ভর্তির জন্য বিবেচিত নয় এমনটি লেখা। এক্ষেত্রে আমি কৃতকার্য নাকি অকৃতকার্য হয়েছি সেটির কিছুই বোঝার উপায় নেই।
জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮টি কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়। এবারের কৃষি গুচ্ছু ভর্তি পরীক্ষার আয়োজকের দায়িত্বে ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই পরীক্ষার ফলাফল গত ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে প্রকাশের পর থেকেই নানা অভিযোগ আসছে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
কৃষি গুচ্ছতে অংশ নেয়া ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন জায়গায় সমাধান করা প্রশ্নোত্তরের সঙ্গে মিলিয়ে যে নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন ফল প্রকাশের পর তার ধারেরকাছেও নেই। অনেকের মেধা তালিকাতেই নাম আসেনি। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও ফলাফল পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পিডিএফ ফাইল আকারে আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে। সেখানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর ফলাফলপত্রের শুধু ছবি তুলে তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে যেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মনে। বর্তমানে এই বিষয়গুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে সম্পূর্ণ ঘোলাটে।
মাহফুজুল আলম নামের এক ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থী জানান, ‘আমার ভর্তি পরীক্ষার রোল ২০৭৩৩ ও বাকৃবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর সমাধান ও যাচাই করে দেখেছি যে আমি ৬৬ নম্বর পাব। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখি, আমার অপেক্ষমাণ তালিকায় অবস্থান এসেছে ১৫৬৯৫তম। আমি যে নম্বর পাওয়ার কথা সেটির কাছাকাছি পেলেও আমার মেধা তালিকায় অবস্থান থাকার কথা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হয়, সেখানে কৃষি গুচ্ছ এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলের প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে ফলাফল সঠিকভাবে মূল্যালয়ের জন্যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে গত রোববার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলোÑপরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ও জিপিএতে প্রাপ্ত নম্বর আলাদাভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, যে উত্তরপত্র দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা আমাদের দেখাতে হবে, ফল নির্ণয়ে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি আছে কি না তা তদন্ত করতে হবে এবং চলমান ভর্তি কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হবে।
এদিকে গত রোববার কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল কেউ পুনঃনিরীক্ষণ করতে ইচ্ছুক হলে আগ্রহী প্রার্থীকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফি হিসেবে ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ নিয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২২ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে কিংবা মেধা তালিকায় অবস্থান করতে সক্ষম হয়নি তাদের মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আমার ধারণা কীভাবে এই ভর্তি পরীক্ষার নম্বর প্রদান করা হয় তা নিয়ে হয়ত একটি সংশয় থাকতে পারে। আমরা কিন্তু জিপিএ’র ভিত্তিতে নম্বর দেইনি। বোর্ড আমাদের এসএসসি ও এইচএসসির যে নম্বর সরবরাহ করেছে তার ভিত্তিতে আমরা দুটিতে ২৫ নম্বর করে ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে যোগ করেছি। বোর্ড আমাদের এসএসসি ও এইচএসসির যে নম্বর প্রদান করেছে তাতে ৫০ এর মধ্যে ৫০ কেউ পায়নি। আর আমরা ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য যে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেছি, ২৪ সেপ্টেম্বর সেটির ফলাফল প্রকাশিত হবে।