নিজস্ব প্রতিবেদক: নদ-নদীর পানি কমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে উত্তরের জেলাগুলোয়। ফলে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাতে গতকাল মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এ সময়ে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারÑএই তিন নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি যমুনার পানিও তখন ধীরগতিতে কমবে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।
তিনি বলেন, ‘উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তবে দুদিন উত্তরাঞ্চলে কিছুটা অবনতি হতে পারে, ব্যাপক অবনতি হবে না। বৃষ্টিপাতের স্কেলটা চলে গেলে আবার উন্নতি হবে।’ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেইসঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাসের বুলেটিন অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় দেশের আটটি নদীর ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দুধকুমার নদীর পানি পতেশ্বরী পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, হাতিয়া পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।
যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সাঘাটা পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, কাজিপুর পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, জগন্নাথগঞ্জ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং পোড়াবাড়ি পয়েন্টি ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।
আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। অন্যদিকে, মেঘনা অববাহিকার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, মারকুলি পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমে বইছিল বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। মেঘনা নদীর মেঘনা সেতু পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সময়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তাতে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে। তবে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানি সমতল বাড়ছে, অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় দুই নদীর পানি বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল কমছে, এ পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীর পানিও সার্বিকভাবে কমছে এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা এ অবস্থা চলতে পারে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ী পয়েন্টে কমে সিরাজগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এবার জুনের শুরুতে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত ১৭ জুন কোরবানির ঈদের আগের দুদিন থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ আশপাশের জেলার অনেক এলাকা ডুবে যায়। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতে নতুন করে বন্যা দেখা দেয় বিভিন্ন জেলায়।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। নীলফামারীর ডিমলায় ১২৮, ময়মনসিংহ ৩৪, সিলেটে ২৮, নেত্রকোনা ২৩ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।