প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে গতকাল। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯৮.৫১ ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে ৯৫.৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৩.০৬ শতাংশ। এ বছর ইবতেদায়ীতে পাসের হার বাড়লেও প্রাথমিকে কিছুটা কমেছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি একজনও পাস করতে পারেনি এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেশ কমেছে। সব মিলিয়ে সফলতার জয়জয়কার। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আমরা অভিনন্দন জানাই। আশা করবো, যে সফলতা নিয়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে যাবে, সেটি যেন তারা ধরে রাখতে পারে এবং পরবর্তী ধাপগুলোয় ঘটাতে পারে এর পুনরাবৃত্তি। শুধু তাই নয়, তাদের সাফল্য যেন গুণে ও মানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার। সংখ্যায় কম হলেও কিছু শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তাদের বলবো, আশা ও সাহস না হারিয়ে নতুন উদ্যমে লেখাপড়া শুরু করতে, যাতে পরের বছর তারাও সফলতা করায়ত্ত করতে পারে। নানা কারণে জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু ব্যর্থতা যেন কখনওই থেমে যাওয়ার প্রতিশব্দ না হয়।
উত্তীর্ণ না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তারা অযোগ্য; বরং প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা তাদের সর্বোচ্চ মেধার প্রকাশ ঘটাতে পারেনি। আগামী পরীক্ষায় সেটির স্ফুরণ ঘটবে বলেই আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেও যারা কোনো কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারেনি, তাদের জন্যও শুভকামনা থাকলো।
এসব পরীক্ষার ফল থেকে আমরা বলতে পারি, দেশে শিক্ষার মান বাড়ছে, যদিও অনেক শিক্ষাবিদ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। আমরা কিন্তু আশাবাদী হতে চাই। শিক্ষার মান ও পরীক্ষার সংখ্যা নিয়ে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীও মাঝেমধ্যে গুণগত মান বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন।
কিছুদিন আগে সংস্কৃতিমন্ত্রী পরীক্ষার বাহুল্য দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা বলবো, এসব বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থীকে এখন সত্যিকার অর্থেই প্রচুর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। এত পরীক্ষার আদৌ প্রয়োজন আছে কি-না, ভেবে দেখা দরকার। একমাত্র গবেষণার মাধ্যমেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে যেসব দেশে, তাদের অভিজ্ঞতা জেনে আমরা সে অনুযায়ী চর্চা করতে পারি। পরীক্ষার সঙ্গে শিক্ষার মানের যোগসূত্র রয়েছে। শিক্ষার্থী, সর্বোপরি দেশের শিক্ষার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবেই অবগত প্রয়োজন কেবল রাজনৈতিক পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত। সংখ্যাগত উন্নতি আমাদের অনেক হয়েছে; এখন প্রয়োজন গুণগত মান বাড়ানো।
Add Comment