উত্তোলন কমানোর ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের বৈঠকে উত্তোলন কমাতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। প্রতিদিন ১২ লাখ ব্যরেল তেল কম উত্তোলন করা হবে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। এ ঘোষণার পর বুধবার পণ্যটির দাম ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স।

২০১৪ সালের পর অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দুবছর ধরে বিশ্ববাজারে পণ্যটি দরপতনে রয়েছে। আট বছরে এই প্রথম দেশগুলো উত্তোলন কমাতে রাজি হলো। ওপেক দেশগুলোর পাশাপাশি ওপেক-বহির্ভূত দেশগুলো প্রতিদিন ছয় লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন কমাবে। তবে এসব দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বৈঠকে। রাশিয়া ইতোমধ্যে প্রতিদিন তিন লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন কমাতে রাজি হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বৈঠকে গতকাল ওপেক প্রেসিডেন্ট কাতারের তেলমন্ত্রী মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল সাদ বলেন, বিশ্বঅর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য ওপেক ও ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো উত্তোলন কমাতে সম্মত হয়েছে। ১২ লাখ ব্যারেল কমিয়ে প্রতিদিন তিন কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হবে।

এ সিদ্ধান্তের পর নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলে ৯ শতাংশ বেড়েছ। এদিন পণ্যটির প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার ৫৩ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১০ শতাংশ। এদিন পণ্যটি ৯১ ডলার ৯৪ সেন্টে বিক্রি হয়।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ওপেকভুক্ত দেশগুলো জ্বালানি তেলের উত্তোলন সম্মিলিতভাবে দৈনিক তিন কোটি ২৫ লাখ থেকে তিন কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়। কিন্তু রাশিয়া ও ইরানের সিদ্ধান্তহীনতায় অনিশ্চয়তায় ছিল চূড়ান্ত চুক্তি।

ওপেকভুক্ত দেশগুলো পণ্যটির সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বাজার দীর্ঘমেয়াদে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ওপেকের উত্তোলন কমলে বাজারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্যটির মজুতপ্রবণতা বাড়বে, যা নিঃসন্দেহে বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করবে।

২০১৪ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয় ১১৫ ডলারে। কিন্তু অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে তা ব্যারেলপ্রতি ২৭ ডলারের নিচে নেমে আসে। অন্যদিকে বিশ্বে তেলের চাহিদাও কমে যায়। বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়া এর একটি বড় কারণ। সে সময় চীনে তেলের চাহিদাও কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমতে থাকে ব্যাপক হারে। নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বালানি তেলের দাম কমায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর মধ্যে রাশিয়া অন্যতম।

২০১৫ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি ৩ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ২০০৯ সালের পর এটাই দেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ধস। দেশটির মুদ্রা রুবলের রেকর্ড দরপতন ঘটে। রাশিয়া সরকারের অর্ধেক আয়ের উৎস হলো তেল ও গ্যাস। রাশিয়ার ২০১৬ সালের বাজেট পাস হওয়ার সময় জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে ৫০ ডলার। ইতোমধ্যে দেশটির সরকার ১০ শতাংশ খরচ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।

ভিয়েনার বৈঠকে ওপেকবহির্ভূত শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলোকেও রাখার চেষ্টা করেছিল সংগঠনটি। কিন্তু অন্যতম শীর্ষ উত্তোলক দেশ সৌদি আরব এতে আপত্তি জানায়। আপত্তির মুখে ওপেকবহির্ভূত শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলোকে এ বৈঠকে শামিলে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। তবে ওপেকবহির্ভূত অন্যতম শীর্ষ তেল উত্তোলক দেশ রাশিয়া এ বৈঠকে অংশ না নিলেও পরবর্তী যে কোনো সময় বৈঠকে বসতে রাশিয়া আগ্রহী।

তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যকার মতপার্থক্য ঐকমত্য বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি করেছিল। কারণ ইরান এ মুহূর্তে তেলের উৎপাদন কমাতে চায় না। অন্যদিকে তেলের উৎপাদন কমানোর ক্ষেত্রে সৌদি আরবও সিংহভাগ দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী।

ইরান বলেছিল, বহু বছর অর্থনৈতিক অবরোধ থাকার কারণে তাদের তেলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সবাই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে।

তবে ওপেকভুক্ত নয়-এমন দেশগুলো শেষ পর্যন্ত তাদের উৎপাদন কতটা কমাবে, তার ওপর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নির্ভর করছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০