নিজস্ব প্রতিবেদক: ওষুধ কিনতে বেরিয়ে কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ৩ জুলাই সোমবার ভোর ৫টার দিকে তাকে কয়েকজন চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। রাতে যশোর থেকে র্যাবের একটি দল তাকে উদ্ধার করে। গতকাল আদালতে হাজির করা হলে তাকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, তুলে নেওয়ার পর ফরহাদ মজহারের ব্যবহƒত নম্বর থেকেই তার স্ত্রীকে ফোন করা হয়। ফোনে ফরহাদ মজহার জানান, যারা তাকে নিয়ে গেছে তারা ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে। তবে মাইক্রোবাসে তোলার পর আর কিছু জানেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার।
সোমবার রাতে উদ্ধারের পর গতকাল সকাল ৯টার কিছু আগে ফরহাদ মজহারকে প্রথমে রাজধানীর আদাবর থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে বেলা ১১টার কিছু আগে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুই ঘণ্টার বেশি সময় সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এরপর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য নি¤œ আদালতে পাঠানো হয় ফরহাদ মজহারকে।
ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবীব মঙ্গলবার বিকালে তার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় ফরহাদ মজহারের বিচারিক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে ১০ হাজার টাকার মুচলেকায় স্বাক্ষর নিয়ে তাকে নিজের জিম্মায় বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন বিচারক। ফরহাদ মজহারের পক্ষে আদালতে মামলা লড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।
সোমবার সকালে ফরহাদ মজহারের পরিবার অপহরণের অভিযোগ করার পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে সন্ধ্যায় খুলনা অঞ্চলে অভিযান শুরু করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানের মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়ায় ঢাকাগামী হানিফ বাসে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর র্যাব-৬-এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, নওয়াপাড়ায় পাওয়ার পর ফরহাদ মজহারকে প্রথম অভয়নগর থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে খুলনায় নিয়ে গিয়ে রাত দেড়টার দিকে ঢাকার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবার অপহরণের কথা বললেও পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক দিদার আহম্মেদ রাতে ফুলতলা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফরহাদ মজহার অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে তাদের সন্দেহ। তিনি আরও বলেন, একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে জার্নি করে, সেভাবেই তিনি ছিলেন। তার সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল, গেঞ্জি ছিল। কিছু টাকাও ছিল। এমনকি মোবাইল চার্জার নিতেও ভোলেননি তিনি। উদ্ধারের তিন ঘণ্টা আগে ফরহাদ মজহারকে খুলনা নিউমার্কেটের সামনে নিজের রেস্তোরাঁয় দেখার দাবি করেছিলেন নিউ গ্রিল হাউজের মালিক আবদুল মান্নান। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব জোর অনুসন্ধান শুরু করে এবং পরে ঢাকাগামী হানিফ বাসে তাকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে ফরহাদ মজহারকে কারা ধরে নিয়ে গেছেÑজানতে চাইলে তার পরিবার এ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবে একদিন আগে ভারতে মুসলিম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি কর্মসূচিতে তার যোগ দেওয়ার কথা বলেন তারা।
উল্লেখ্য, ফরহাদ মজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। পরে উবিনীগ নামে একটি এনজিও গড়ে নয়াকৃষি আন্দোলন শুরু করেন, যা সফলতার মুখ দেখেনি। বর্তমানে তিনি ‘চিন্তা’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের সমালোচনামূলক বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য তিনি আলোচিত হয়েছেন।
Add Comment