কমবেশি সবাইকে নানা কারণে উদ্বেগ কিংবা দুশ্চিন্তা পোহাতে হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে পারলেই তবে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। তা না হলে জটিল হয়ে উঠতে পারে জীবন। এমনকি নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। চিন্তার কিছু নেই, এ ভাবাবেগ থেকে মুক্তির অনেক উপায় রয়েছে। উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারলে উদ্বেগ কমিয়ে আনা সম্ভব। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন পরিচালনা করা যায়।
অনেক খাবার উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। খাবারের পাশাপাশি ব্যায়াম, প্রিয়জনদের সঙ্গ, ধ্যান, গান প্রভৃতি উদ্বেগ কমায়। প্রথমে জেনে নিতে পারেন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে।
বাদাম: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এক মুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের ভেতরের কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমায়। ফলে একদিকে যেমন উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কমে, অন্যদিকে মনও চাঙা হয়ে ওঠে।
মাছ-মাংস: বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের খাবার খেলে শরীরে লে-লাইসাইন নামে এক ধরনের অ্যামিনো এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা নিউরোট্রান্সমিটারের ক্ষমতা বাড়ায়। এতে মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ থাকে। ফলে উদ্বেগ কমে।
ভিটামিন ‘ডি’: গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা বৃদ্ধি পেলে উদ্বেগ কমে। তাই এ ভিটামিনটির ঘাটতি দূর করতে হবে। ভিটামিন ‘ডি’র ভালো উৎস হলো সূর্যালোক। তাই সকালে গায়ে রোদ মাখালে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারও খেতে পারেন।
কফি: কফি খেয়ে উদ্বেগ কমানো যায়। তবে পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে দিনে দুই কাপের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। শরীরের জন্য প্রয়োজন ক্যাফেইন। এতে দুশ্চিন্তা অনেকাংশে কমে যায়। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন ক্ষতি করে।
ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক: গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি মস্তিস্ক ও শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেক খাবারে এসব উপাদান পাওয়া যায়, এগুলো খেলে উদ্বেগ অনেকটা কমে যাবে।
জাম: ফলটিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামক বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়। তাই যখনই উদ্বেগ বেড়ে যাবে, তখনই এক মুঠো জাম খেতে পারেন।
রসুন: রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। এ উপাদানটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রসঙ্গত, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে থাকলে স্ট্রেস লেভেলও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তাই রান্নায় রসুন ব্যবহার করতে পারেন।
পটাশিয়াম জাতীয় খাবার: স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পটাশিয়াম জাতীয় খাবার খেতে পারেন। অ্যাভোকাডো রাখতে পারেন খাদ্য তালিকায়। এ ধরনের পটাশিয়াম জাতীয় খাবার উদ্বেগ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
শরীর চর্চা: গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শরীর চর্চায় এন্ডোরফিন নামক একটি হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। হরমোনটি মনকে চাঙা করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে উদ্বেগ কমে, উৎফুল্ল হয়ে ওঠে মন।
মেডিটেশন: প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন। সপ্তাহখানেক পরেই পার্থক্যটা অনুভব করতে পারবেন। দেখবেন অনেকটাই কমে গেছে। টেনশন কমছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাতের যে কোনো সময় বেছে নিতে পারেন মেডিটেশনের জন্য। মূলত শান্ত পরিবেশ মেডিটেশনের জন্য উপযুক্ত।
প্রিয়দের সঙ্গ: অতিরিক্ত উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার সময় এমন কোনো মানুষের সঙ্গ বেছে নিন, যিনি কাছে থাকলে অনেকটা চাপমুক্ত থাকা যায়। মনোবিদদের মতে, এমন প্রিয় সঙ্গীকে নিজের সব সমস্যার কথা বলতে পারলে মনের চাপ অনেকটাই কমে যায়।
গান: গান শুনেও উদ্বেগ কমানো সম্ভব। তাই দিনের মধ্যে কিছুটা সময় গান নিয়ে কাটান। এতে মনের ওপর পড়ে থাকা চাপ অনেকাংশে কমে যাবে।
শখ: উদ্বেগ বেড়ে গেলে শখগুলোকে প্রাধান্য দিলে ফল পাওয়া যায়। গল্পের বই পড়াই হোক বা লেখালেখি শখ টেনশন কমাতে সহায়ক। শখের বশবর্তী হয়ে মনকে যত-ই ইতিবাচক দিকে রাখবেন, ততই উদ্বেগ কমবে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ: মনে ক্ষোভ বা রাগ জমা না রেখে ঝেড়ে ফেলুন। এতে রাগ যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনি উদ্বেগ কমবে।
উদ্বেগ কমানোর চটজলদি উপায়
