উদ্বোধন হলেও আটকে আছে চুয়াডাঙ্গার দুই বন্দরের ভবিষ্যৎ

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: উদ্বোধনের পর পরিদর্শন আর মিটিংয়ে সীমাবদ্ধ রয়েছে চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া ও দর্শনা-গেঁদে স্থলবন্দরের কার্যক্রম। আর এই দুটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম দ্রুত সময়ে চালু করা গেলে বদলে যাবে দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

বন্দর দুটি চালু হলে সহজে ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিতে পারবেন। সড়কপথে কমবে অন্য স্থলবন্দর থেকে দূরত্ব। সরকারের রাজস্ব আয় হবে কোটি কোটি টাকা। স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আর এতে অর্থনৈতিকভাবে বদলে যাবে চুয়াডাঙ্গার দৃশ্যপট।

২০০২ সালে ১২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনকে রাষ্ট্রপতির আদেশে স্থলবন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এ পথ দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজ করার লক্ষ্যে স্থলবন্দর করার ঘোষণা দেয় সরকার। স্থলবন্দর উদ্বোধনের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিদর্শন আর মিটিংয়ে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। স্থলবন্দর কার্যক্রম এখনও বাস্তবে রূপ নেয়নি। স্থানীয়রা হতাশ কবে বাস্তবে আলোর মুখ দেখবে এই স্থলবন্দর।

এসআরও সংশোধন এবং দুই দেশে এক কিলোমিটার নতুন সড়ক প্রশস্ত করা সম্ভব হলে দর্শনা-গেঁদে স্থলবন্দর চালু করা সম্ভব হবে। চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দর্শনা রেলপথের পাশপাশি সড়কপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থা চালু করতে এসআরও সংশোধন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর গেঁদে-দর্শনা বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন ভারতের ল্যান্ড পোর্ট অর্থরিটির চেয়ারম্যান ও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এনএন মিনহা। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বন্দর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

দর্শনা রেলপথ দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ১৯৬২ সাল থেকে। বাংলাদেশের দর্শনা ও ভারতের গেঁদে এলাকায় প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো ও লোকবল রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে থমকে রয়েছে স্থলবন্দর চালুর কার্যক্রম।

দর্শনায় রয়েছে কাস্টমস শুল্ক স্টেশন, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি, অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বিজিবির ছয়টি ক্যাম্প।

অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর কার্যক্রমের অবস্থা দর্শনার মতোই। উদ্বোধনের আট বছরেও বন্দর চালু করা সম্ভব হয়নি নানা জটিলতায়। ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। একই বছরের ২৪ আগস্ট বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ২০১৪ সালের ৪ জুন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও সে সময় দায়িত্বরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ সরণ বন্দর পর্যবেক্ষণ শেষে অল্প সময়ে চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বন্দরটি আলোর মুখ দেখেনি।

১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু থাকলেও পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক স্টেশনটি চালুর নির্দেশ দিলেও তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। জীবননগর সীমান্তের দৌলতগঞ্জ এলাকায় রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্প এলাকার মাজদিয়া অংশের স্থলবন্দরটি। দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় রয়েছে প্রশস্ত সড়ক। বন্দরটি চালু করা হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে পরিবহন ব্যয় ও সময় অনেক হ্রাস পাবে। বন্দর থেকে ভারতের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। অন্য স্থলবন্দর থেকে দৌলতগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে প্রায় ২৫ কিলোমিটার।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। দর্শনা স্থলবন্দরের জন্য ৪৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের জন্য যাচাই করা হয়। এ জমি অধিগ্রহণ করা হলে ট্রাক টার্মিনাল, রেলইয়ার্ড শেড, ওয়্যার হাউস, আবাসিক এলাকাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল লতিফ অমল বলেন, ১৫০টি ট্রাক থেকে পণ্য লোড-আনলোড করা যাবে প্রথমে। চলাচলের ভালো রাস্তা রয়েছে। বন্দরের কাজে ব্যবহারের জন্য স্থানীয়দের জমি অধিগ্রহণ সম্ভব।

দর্শনা স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান বলেন, অল্প কিছু কাজ ছাড়া বন্দর চালুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দর্শনায় সব ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। দুই দেশের সরকার চাইলে বন্দর চালু করা সম্ভব।

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, বন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য।

দর্শনা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার সারাফাত হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিদল গত মাসে স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে বন্দর চালু করার পথ প্রশস্ত হবে। বন্দর চালু করা হলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০