ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ধান, পাট ডাল, সরিষা, বাদাম, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের একাধিক জাত উদ্ভাবনের পর এবার উদ্ভাবন করেছে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের বিনামরিচ-১ নামে অধিক ফলনশীল ও তুলনামূলক কম ঝালের একটি মরিচের জাত। উচ্চ ফলনশীল জাতের এই মরিচ একই সঙ্গে মসলা, সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এটি আকারে তুলনামূলকভাবে বড় ও মোটা। প্রতিটি গাছে প্রতিবারে ৩০ থেকে ৩৫টি মরিচ ধরে। এভাবে প্রতি মৌসুমে আট থেকে ৯ বার ফসল তোলা যাবে। এতে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন মরিচ ফলানো সম্ভব।
গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম ২০১২ সালে চীনের একটি স্থানীয় মরিচের জাতের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে ভিয়েনা ও অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন মাত্রায় পরমাণু রেডিয়েশন প্রয়োগ করে চার বছর গবেষণা করে তিনি এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে জাতটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। পরবর্তীকালে দেশের বিভন্ন অঞ্চলে শীত মৌসুমে উদ্ভাবিত জাতের মরিচ চাষ করে কাক্সিক্ষত ফল পান। ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বাংলাদেশ বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বিনামরিচ-১ উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধিত হয়। তিনি জানান, আমাদের দেশের প্রচলিত মরিচের জাতের তুলনায় উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে বিনামরিচ-১-এর ফলন ১৩০ থেকে ১৪০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে এর ফলন হবে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন। এটি মসলা, সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার-উপযোগী। এর উৎপাদন সময় সাধারণত শীতকাল। অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মধ্য ডিসেম্বরের মধ্যে এক মাস বয়সী চারা রোপণ করতে হবে। চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটি উপযুক্ত।
সম্প্রতি ময়মনসিংহের সুতিয়াখালী এলাকায় বিনামরিচ-১-এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিনার মহাপরিচালক বলেন, বিনামরিচ-১ উদ্ভাবন একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এ মরিচ সারা দেশে উৎপাদিত হলে দেশের কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, মানুষের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বাড়বে। দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। তিনি উপস্থিত কৃষকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ভাতের ওপর চাপ কমিয়ে শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। মাঠ দিবসে উপস্থিত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ধরনের ফসল পেয়ে তারা বেশ খুশি, আগামীতে তারা এই বিনামরিচ-১-এর বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করবেন।
আগামী মৌসুমে কৃষকরা বিনামরিচ-১-এর প্রয়োজনীয় বীজ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিনার প্রধান কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এম ইদ্রিছ আলী