নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নত পুঁজিবাজারের কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়ের ব্যয় কমাতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক হারে বন্ড মার্কেট থেকে ঋণ নিয়ে পরিচালনা দক্ষতা উন্নত করতে পারে। একই সঙ্গে সরকার কম দামে বন্ড মার্কেট থেকে বাজেটে ঘাটতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের অর্থায়ন করতে পারে। কিন্তু পুঁজিবাজার ও বিশেষ করে বন্ড মার্কেট এখনও ভালোভাবে বিকশিত হয়নি। এই অবস্থায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুঁজিবাজারের বিকাশ এবং দেশে বিনিয়োগের প্রচার প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে গতকাল রোববার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণায় জানানো হয়েছে।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজার নিয়ে একটি চ্যাপ্টার রয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি, পুঁজিবাজারে আসলে দুইটি অংশ। একটি ইক্যুইটি, অন্যটি বন্ড। আমাদের এখানে ইক্যুইটি মার্কেট নিয়ে সবাই কথা বলেন। এ মার্কেটের প্রায় ৯৮ শতাংশ ইক্যুইটি মার্কেট। আর ২ শতাংশ বন্ড মার্কেট। আমরা চাচ্ছি এই বন্ড মার্কেটটা ডেভেলপ করুক। কারণ আমাদের এখানে ব্যাংক শর্ট টার্মে লোন নিয়ে লং টার্মে ইনভেস্ট করছে। আসলে এটা ম্যাচুরিটি মিসম্যাচ।
তাই আমরা উৎসাহিত করতেছি বন্ড মার্কেটকে ডেভেলপ করার জন্য। এবার ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট যেটা হয়েছে, সেখানে বন্ডকে ইক্যুইটি থেকে আলাদা করে ফেলেছি যাতে ব্যাংকগুলো এতে বেশি আগ্রহী হয়।
আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের বন্ড মার্কেটকে ডেভেলপ করার জন্য গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা আমাদের ইনভেস্টমেন্টকে সাহায্য করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে। ইক্যুইটি মার্কেট নিয়ে কাজ হচ্ছে। সেটা চলতে থাকুক, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে পুঁজিবাজারে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের দেয়া ব্যাংকের শ্রেণিবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রভিশন ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে বন্ড ইস্যু করে অর্থের সংস্থান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মুদ্রানীতিতে জানানো হয়েছে, দেশের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি উন্নত পুঁজিবাজার প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ সুউন্নত পুঁজিবাজারের অনুপস্থিতির কারণে ব্যাংকের অর্থের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের জন্য স্বল্পমেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভর করে। এতে আর্থিক অবস্থার পরিপূর্ণতায় ঘাটতি তৈরি করে এবং তারল্য পরিচালনার ওপর চাপ দেয়। একটি উন্নত পুঁজিবাজার এবং বিশেষ করে বন্ড মার্কেট অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের জন্য বিশাল অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং সিস্টেমের কার্যক্ষমতায় অবদান রাখতে পারে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে পর্যাপ্ত তরল্যের নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে তহবিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়। সেই সঙ্গে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয়। সেই সঙ্গে সুকুক বন্ডে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে এবং বর্তমানে বন্ডটিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ চালু রয়েছে।
এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একটি নতুন আইন অনুমোদন করা হয়েছে যেখানে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যাতে সহায়তা করে, সে বিষয়ে আইনে তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জোর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নীতিগত সহায়তার লক্ষ্যে উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।