প্রতিনিধি, ফলবাড়ী (দিনাজপুর) : তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, উন্নয়নের নামে দেশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ধ্বংস করা যাবে না। তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য পরিবেশ, মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্থায়ী সম্পদ ধ্বংস করে কোনো প্রকল্প করা হলে সেই প্রকল্প উন্নয়নের প্রকল্প নয়, সেটি ধ্বংসের প্রকল্প। গতকাল শুক্রবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে, ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এক শ্রেণির লুটেরা সম্প্রতিক জ্বালানি সংকটের অজুহাতে আবারও ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, যারা কয়েক বছর আগেই বিদেশে গ্যাস বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করেছিল, সেদিন বিদেশে গ্যাস রপ্তানি করা হলে আজ সারাদেশ অন্ধকারে পড়ে যেত। তিনি বলেন, সেদিন ফুললবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়ন হলে ফুলবাড়ীসহ সারা উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতো।
এদিকে ফুলবাড়িবাসীসহ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৫ সেপ্টম্বর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা করেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন, ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করা না হলে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলন নতুন করে আন্দোলন শুরু করা হবে।
তিনি সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ফুলবাড়ী থেকে যে আন্দোলন শুরু করা হবে, সেই আন্দোলনে আপনার সরকার টিকে থাকতে পারবে না, তাই অনতিবিলম্বে ফুলবাড়ীবাসীর রক্তে লেখা ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। দিবসের শুরুতে সকালে একটি শোকর্যালি স্থানীয় নিমতলা মোড় থেকে বের হয়। পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে পৌর শহরের শাখা যমুনা নদীর ধারে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী গণ-আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহারা আমিন, সালেকিন ও তরিকুলের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্পণ ও নীরবতা পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৬ আগাস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রস্তাবিত ফুলবাড়ী কয়লা খনি উš§ুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের প্রতিবাদে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকে এশিয়া অ্যানার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিডিআরের গুলিতে প্রাণ হারায় আমিন সালেকিন ও তরিকুল নামে তিন যুবক। আহত হয় আরও তিন শতাধিক মিছিলকারী। এরপর ফুলবাড়ীবাসীসহ আশপাশের উপজেলার বাসিন্দাদের গণ-আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীসহ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সঙ্গে ৬ দফা একটি সমঝোতা চুক্তি করে, যা ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি নামে পরিচিত।
