নিজস্ব প্রতিবেদক: গণতন্ত্র, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন সবই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি নিশ্চিত করা অসম্ভব। তাই উন্নয়নের নামে ন্যায় ও স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করা যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিআইডিএসের এবারের সম্মেলনের বিষয়বস্তু ‘উন্নয়ন, ন্যায্যতা এবং স্বাধীনতা’। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউকের অলস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এসআর ওসমানি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অভাব উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সরকারের উচিত সুশাসন, আইনের শাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে এগুলো নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা।
ওসমানী বলেন, আমরা যখন উন্নয়নের জন্য কথা বলি, তখন ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করতে পারি না। কারণ এগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। উন্নয়ন চাইলে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার উন্নয়নকে সমর্থন করে এবং তাদের অনুপস্থিতি উন্নয়নে বাধা দেয়। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অভাব থাকলে, ঋণ বৈষম্য দেখা দেয় এবং দরিদ্ররা পর্যাপ্ত তহবিল পায় না। তাছাড়া এটি আরব বসন্তের মতো সামাজিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে পারে।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নে মগ্ন হওয়া উচিত নয়; বরং আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করে তাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি আচ্ছন্ন হওয়া উচিত। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেলে বেসরকারি খাত উন্নয়েনর জন্য কাজ করবে। দুঃখের বিষয় অধিকাংশ সরকারই এর বিপরীত কাজ করে।”
ড. বিনায়ক সেন বলেন, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার চিন্তাধারা অনুসরণ করতে গিয়ে সবাইকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তাধারায় ফিরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের মন পাথরের মতো হয়ে যায়। এজন্য গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ। এখন বিশ্বব্যাপী আয়বৈষম্য বাড়ছে। এখন ভাবা দরকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে। জনগণ আগে উন্নয়ন চায় নাকি গণতন্ত্র চায় সেটির
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, গরিব মানুষ সুশাসন ও ভোটের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা চায় উন্নয়ন ও ভাতের নিশ্চয়তা। সুশাসন ও ভোটাধিকার সুশীল সমাজের মাথা ব্যথার কারণ হলেও সাধারণ মানুষের নয়। তারা টিউবওয়েল চায়, ভালো টয়লেট চায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে ভালো ভালো ওষুধ চায়। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতে যেতে পারে, তারা সেগুলোই চায়। তাদের চাওয়া আরও নাগরিক সমাজের চাওয়ার মধ্যে ব্যাপক ফারাক।
তিনি আরও বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ ও সিঙ্গাপুরের লিকুয়ান ইউ দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। তারা উন্নয়নের ক্ষেত্রে রোল মডেল তৈরি করে গেছেন। সেখানে তো কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বাংলাদেশ বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে বলা হয় স্বৈরশাসক। কিন্তু প্রশ্ন হলো উন্নয়নের দরকার আছে কিনা। দীর্ঘদিন একটি রাজনৈতিক দল সরকারে থাকায় মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে কিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, নির্বাচন দিয়ে একটি দেশের সব কিছুই বিচার করা যায় না। বিষয়টি হলো সমাজের একটি বড় পরিবর্তনের জন্য কিছু করলে সেটি মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। উন্নত দেশে সবাই পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করে। আমাদের মতো দেশে পরিবর্তনকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। ফলে সহিংস ঘটনার ঘটে। অর্থনীতিতে নানা পরিবর্তন আসে যা সমাজকে বা জনগণকে মেনে নিতে হয়। যখনই সমাজ এ পরিবর্তন মানতে চায় না তখন অস্থিতিশীল তৈরি হয়। অথচ পরিবর্তন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।
অপর একটি অধিবেশনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এগুলো হলোÑমুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে অনেক উচ্চ স্তরে সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করা।
এ অধিবেশনের সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত উল্টো রথে আছে। যেমনÑ ব্যাংকের পরিচালক একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি হতে পারবেন। এটি ঠিক নয়। এছাড়া সার্বিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা আছে। শঙ্কার অন্যতম কারণ হলো যদি স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে রপ্তানিতে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হবে।