নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক খাতের কথা বিবেচনা করে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। মাত্র আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই প্রজ্ঞাপনের আলোকেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন গভর্নর যোগদানের পর থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো যুগান্তকারী। একটা সময় সব ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট (৯ শতাংশ) বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তকে ভুল ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। ঋণ পুনঃতফসিলে যে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। সেটাও কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ প্রজ্ঞাপন কোনো প্রভাবশালী গ্রুপের চাপে জারি করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, এখন থেকে ঋণের ভালো-মন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেই নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি দেবে, তবে ঋণের দায়ভার আর নেবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যে গ্রাহককে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ দিয়েছে, সেটি ভালো হলেও পর্ষদের খারাপ হলেও তার দায় পর্ষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, খেলাপি সুবিধা পর্ষদ দেবে, রিশিডিউল তারা করবে। তাই ঋণের ভালো-মন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই বলেছিলেন, সেন্ট্রাল ব্যাংক এপেক্স বডি হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহককে চেনে। ব্যাংকগুলো রিশিডিউল কীভাবে করবে, তারা ঠিক করবে, যেহেতু গ্রাহককে তারা চেনেন। কোন খেলাপিকে কী সুবিধা দেয়া হবে, এটা ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ খেলাপিকে সুবিধা দেয়া নয়, আবার ব্যাংকের গ্রাহককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেনে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্সপেকশন করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, সোমবারের সার্কুলারে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেয়া হয়নি। একটা প্রেক্ষাপটের কারণে সার্কুলার হয়েছে, পুনরায় সার্কুলারও হয় অনেক সময়। তবে অপারেশনাল কাজটা ব্যাংকগুলো নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে করবে। এটা তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে জবাবদিহি বাড়বে, খেলাপি কমবে। এ স্বাধীনতা ব্যাংকগুলোর ওপর দেয়ার ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও বোর্ডের ওপর দায়ভার চলে যায়।
নতুন ওই সার্কুলার কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান গভর্নর পিওর মানুষ, তিনি ব্যাংককে ওন করেন। নিজ উদ্যোগে তিনি কাজ করছেন। কারও চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই সার্কুলারের পরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন এবং খেলাপি ঋণ কমে আসবে। এখানে ঋণ বিতরণকারী জুনিয়র কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যাংকের পর্ষদকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনামতে, ‘এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেয়া হবে, তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংক মালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেয়া যাবে, তা ঠিক করে দেবেন। এত দিন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। সেই ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে থাকছে।’
নতুন ওই নির্দেশনামতে, এখন থেকে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হবে। এর আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় পেলে এখন পরিশোধ করা যাবে পাঁচ থেকে আট বছরে। একই সঙ্গে নতুন করেও ঋণ পাওয়া যাবে। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘কভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। নতুনভাবে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ-সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।’