Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:55 pm

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা আনা হোক

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। পরে কমিটি পরবর্তী বৈঠকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শককে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ সময়কালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকের কার্যপত্র অনুযায়ী, কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে তথ্য সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটি স্পষ্ট নয়। ওইসব প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা তথ্য থেকে স্পষ্ট হওয়া সম্ভব নয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অসামঞ্জস্য এবং তা নিয়ে সংসদীয় কমিটির অসন্তোষের কথা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তা বোঝার সুযোগ নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে দেখা গেছে, পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। তা চলতি বছর ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি পাঁচ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি তিন দশমিক ৫৩ শতাংশ। কুমিল্লা কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালে। শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। প্রকল্পের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি ছয় দশমিক ৪৫ শতাংশ। ১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে, শেষ হওয়ার কথা এ বছরের জুনে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ভৌত অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। আরও ৬টি প্রকল্পের অগ্রগতিও একই ধরনের।

আমাদের দেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ব্যয় বাড়ছে। বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণে সর্বাপেক্ষা বেশি ব্যয় করার বিশ্বব্যাপী পরিচিতিও রয়েছে। এখন সামনে এলো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এর বাইরে নয়। এটি হতাশার। 

কভিডকালে নির্মাণে কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কিছুটা ধীর হতেই পারে। কিন্তু তা কতটা যৌক্তিক কতটা দায়িত্বহীনতা, সেটিও বিবেচ্য। ধীরগতির কারণে যেন ব্যয় বেড়ে না যায়। বেশি ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামো মানসম্পন্ন হয়, এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু জনমণে এ ধারণাও রয়েছে, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। কাজে বিলম্ব হলে একশ্রেণির কর্মকর্তার পকেট ভারী হয়। তারা ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য কারণে-অকারণে কালক্ষেপণ করেন। ফলে বেশি ব্যয়েও নি¤œমানের কাজ হয়ে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচ্য প্রকল্পগুলোসহ কোনো প্রকল্পেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রত্যাশিত নয়। আমরা মনে করি, সংসদীয় কমিটির পরামর্শের আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। কাজে গতি আসবে এবং প্রকল্পগুলোর সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।

শিশুর জিংকের প্রয়োজনীয়তা

স্বল্প জন্ম ওজনের ও আমিষ-ক্যালরি ঘাটতিজনিত অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুর বৃদ্ধিতে জিংক সাহায্য করে। শিশু যখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তাকে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক দিতে বলা হয়।

মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এর সঙ্গে প্রায় ৯০টির বেশি উৎসেচক বা এনজাইম জড়িত, যেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দস্তা বা জিংক। এ ছাড়া জিংক শরীরের কোষকলার গাঠনিক কাঠামো বজায় রাখা এবং শর্করা, চর্বি ও আমিষের বিপাক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে। গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে জিংকের বিশেষ ভূমিকা আছে। শরীরে জিংকের স্বাভাবিক পরিমাণ দুই থেকে তিন গ্রাম। দস্তা শরীরের বিশেষ কোনো কোষকলায় অতিরিক্ত পরিমাণে জমা থাকে না। ফলে নিয়মিত বাইরে থেকে শরীরে দস্তা সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়ে।

জিংকের প্রধান খাদ্য উৎস: দানাশস্য ও উপজাত খাদ্য, ডাল ও সয়াবিন, মাংস ও ডিম, কলিজা, ডিমের কুসুম, মাছ, শাক, ফল, দুধ, বাদাম ইত্যাদি খাবারেও জিংক পাওয়া যায়।

শিশুর দেহে জিংক ঘাটতির কারণ: অরুচি, আন্ত্রিক রোগ, যকৃতের রোগ, পুড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে।

জিংক ঘাটতিজনিত সমস্যা: জিংকের অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, জš§কালীন শারীরিক ত্রুটি, রোগপ্রতিরোধী শক্তি কমে যাওয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, চর্মরোগ, উদরাময় রোগ, খাবারে অরুচি, রাতকানা প্রভৃতি হতে পারে। তবে শিশু জিংক ঘাটতিজনিত সংকটে পড়লেও দৈহিক উপসর্গ তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে।

জিংকের ব্যবহার: ‘উইলসন ডিজিজ’ নামের একটি জন্মগত রোগ সরাসরি জিংকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। স্বল্প জন্ম ওজনের ও আমিষ-ক্যালরি ঘাটতিজনিত অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুর বৃদ্ধিতে জিংক সাহায্য করে। শিশু যখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তাকে খাওয়ার স্যালাইন ও দুই সপ্তাহের জন্য জিংক দিতে বলা হয়। এ ছাড়া শিশু যখন টিপিএন, হেপাটাইটিস, এক্রোডারমাইটিস এনটেরোপ্যাথিকা (জেনেটিক রোগ) প্রভৃতিতে ভোগে, তখন জিংক ঘাটতিতে পড়ে।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল