Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:01 pm

উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সহযোগিতা অথবা অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দেশি-বিদেশি নীতিনির্ধারক, গবেষক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন: সমস্যা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হলো একটি ব-দ্বীপ যেখানে ৭০০ নদী এবং বিস্তীর্ণ নিচু জমি ও জলাভ‚মি রয়েছে এবং আমাদের এটিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকা সত্তে¡ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক একটি টেকনো-ইকোনমিক মহাপরিকল্পনা। এর পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তিনি এজন্য বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডসের এগিয়ে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উল্লেখ করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা চিন্তা করেই তার সরকার কিছু স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি; যাতে বাংলাদেশকে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও বাংলাদেশ যাতে টেকসই হয়, এর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যাতে অর্জন করা সম্ভব হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা এই ব-দ্বীপের সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ভারতের সঙ্গে স্থায়ীভাবে একটি যৌথ নদী কমিশন গঠনে ইন্দিরা গান্ধীকে রাজি করান। ফলে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ইন্দিরা গান্ধীর ঢাকা সফরকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধার উন্নয়নে দুদেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের জন্য এবং সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রিড স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য যৌথ ইশতেহার (১৪-ক) ঘোষণার মাধ্যমে যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়। ওই ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে একই বছর ২৪ নভেম্বর যৌথ নদী কমিশন স্ট্যাটিউট স্বাক্ষরিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াস, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড়ধস ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলতে হয়। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত দুর্যোগ মোকাবিলার নীতিমালা আমরা অনুসরণ করে চলি।

তিনি ‘কপ-১৫’-এ যোগ দিয়ে দেশে ফিরেই জলবায়ুর ‘অভিযোজন এবং প্রশমনে’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড করে পদক্ষেপ নেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্ল্যানটা এ জন্যই আমরা এখন গ্রহণ করেছি। কারণ শত বছরের বাংলাদেশ যাতে টেকসই হয় এবং উন্নত-সমৃদ্ধশালী হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কাজেই এ জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের জনসংখ্যাকে বাঁচানোর পাশাপাশি তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নেও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং খাদ্য পুষ্টির নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা একান্তভাবে অপরিহার্য। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়লেও ভৌগোলিক সীমারেখা বাড়বে না, সেটি মাথায় রেখেই আমরা গবেষণা করছি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিও তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এ্যানি গেরাড ভান লিউয়েন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।