উন্নয়নের নামে জীব-বৈচিত্র পরিবেশ ধ্বংস করা যাবেনা : আনু মোহাম্মদ

smart

প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : তেল ,গ্যাস,খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, উন্নয়নের নামে দেশের জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ ধ্বংশ করা যাবেনা। তিনি বলেন জীব-বৈচিত্র পরিবেশ, মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্থায়ী সম্পদ ধ্বংশ করে কোন প্রকল্প করা হলে সেই প্রকল্প উন্নয়নের প্রকল্প নয়, সেটি ধ্বংসের প্রকল্প।

তিনি শুক্রবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে, ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।

এদিকে ফুলবাড়ীবাসীসহ তেল ,গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দও রক্ষা জাতীয় কমিটির সাথে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী ১৫ সেপ্টম্বর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষনা করেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করা না হলে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করে নতুন আন্দোলন শুরু করা হবে। তিনি সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন ফুলবাড়ী থেকে যে আন্দোলন শুরু করা হবে, সেই আন্দোলনে আপনার সরকার টিকে থাকতে পারবেনা, তাই অনতিবিলম্বে ফুলবাড়ীবাসীর রক্তে লেখা ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানান।

দিবসের শুরুতে সকাল ৯টায় তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে একটি শোক র‌্যালী স্থানীয় নিমতলা মোড় থেকে বের হয়ে, পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে পৌর শহরের শাখা যমুনা নদীর ধারে ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ী গণআন্দোলনে আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহারা আমিন, সালেকিন ও তরিকুলের স্বরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্পন ও নিরবতা পালন করা হয়। পুষ্পার্পন ও নিরবতা পালন শেষে স্মৃতিস্তম্ভের প্রাঙ্গনে আলোচনাসভা ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ফুলবাড়ী গণআন্দোলন ও ট্রাজেডি দিবস উদযাপনে আলোচনা সভা ও জনসমাবেশে, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে, বিশেস অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন, জাতীয় গণফ্রোন্ডের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রিয় সম্পাদক মন্ডলির সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু ওর্য়াকাস পাটির কেন্দ্রিয় সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন লাবু, বাসদ এর কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম লাল্টু, বাসদ (মাহাবুব) এর কেন্দ্রিয় আহবায়ক সন্তোষ গুপ্ত, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের আহবায়ক মনিরুজ্জামান মনির, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলির উপদেষ্ঠা নাজার আহম্মেদ।

এতে অনান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী উপজেলা সিপিবর সম্পাদ নুরুজ্জামান জামান,উপজেলা ওর্য়াকাস পাটির সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিকদার, গণফ্রোন্ডের ফুলবাড়ী শাখার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক হিমেল মন্ডল, কমিউনিস্ট লীগের ফুলবাড়ী শাখার সম্পাদক সঞ্জিব প্রসাদ জিতু, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার নেতা, এমএ কায়উম, সহকারী অধ্যাপক জার্জিজ আহম্মেদ, হামিদুল হক প্রমুখ।

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ তার বক্তব্যে আরো বলেন এক শ্রেনীর লুটেরা তারা সম্প্রতিক জ্বালানী সংকটের অজুহাতে আবারো ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন যারা কয়েক বছর আগেই বিদেশে গ্যাস বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করেছিল, সেদিন বিদেশে গ্যাস রপ্তানি করা হলে আজ সারা দেশ অন্ধকারে পড়ে যেত।এরপর তারা ফুলবাড়ীর কয়লা বিদেশীদেরও হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু ফুলবাড়ীবাসী তা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করেছে। তিনি বলেন সেদিন ফুললবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়ন হলে ফুলবাড়ীসহ সারা উত্তারাঞ্চল মরুভূমিতে পরিনত হত। তিনি বলেন যে প্রকল্পের কারনে পরিবেশ ধ্বংশ হয়, মানুষের জিবন-জিবীকা ধ্বংশ হয়, সেই প্রকল্প কোন উন্নায়ন প্রকল্প নয়, সেটি ধ্বংশ প্রকল্প। অবিলম্বে কয়লা ভিক্তিক সকল ধ্বংশকারী প্রকল্প বাতিল কওে নবায়নযোগ্য জ্বালানী দিয়ে পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নের আহবান জানান।

ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটনের নেতৃত্বে পৌর পরিষদ ও ফুলবাড়ী সম্মিলিত পেশাজিবী সংগঠনের উদ্যোগে পৃথক ভাবে র‌্যাালী পুষ্পার্পন করেন।

এদিকে ফুলবাড়ী সম্মিলিত পেশাজিবী সংগঠনের উদ্যোগে নিতলা মোড়ে পৃথক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজিবী সংগঠনের আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকসহ পেশাজিবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দগণ।
এছাড়া সকালে সূর্য্যরে আলো ফুটার সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও পেশাজিবী সংগঠনের উদ্যোগে পৃথক পৃথক শোক র‌্যালী পৌর শহর প্রদক্ষির করে ও স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্পন করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে স্মৃতিস্তম্ভেও প্রাঙ্গন।

উল্লেখ্য ২০০৬ সালের ২৬ আগাস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রস্তাবিত ফুলবাড়ী কয়লা খনি উম্মুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের প্রতিবাদে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকে এশিয়া এ্যানার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানীর অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গিয়ে তৎকালিন আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্য বিডিআর এর গুলিতে প্রাণ হারায় আমিন সালেকিন ও তরিকুল নামে তিন যুবক। গুলিতে আহত হয় আরো তিন শতাধিক মিছিলকারী। এরপর ফুলবাড়ীবাসীসহ আসপাশের উপজেলার বাসীন্দাদের গণআন্দোলনের মুখে তৎকালিন সরকার ফুলবাড়ীবাসীসহ তেল, গ্যাস , খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাথে ৬ দফা একটি সমজোতা চুক্তি করে, যা ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি নামে পরিচিত। এর পর থেকে আন্দোলনকারী সংগঠন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর নক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ীবাসী ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে আসছে ও ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস ও ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০