Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:34 pm

উন্নয়ন করতে হলে বৈষম্য দূর করতে হবে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে ধনী-গরিবের বৈষম্যও বেড়ে যাওয়ার দিকটি তুলে ধরে তা কমিয়ে আনতে মনোযোগী হওয়ার সুপারিশ এসেছে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে, তা মোকাবিলায় এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই গোলটেবিলের আলোচকরা। খবর বিডিনিউজ।

বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক ও সাংবাদিকরা ঢাকার গুলশানের আমারি হোটেলে ‘উন্নয়নশীল বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু বৈষম্য কমছে না, বেড়েছে।’ তিনি অঞ্চলভিত্তিক কর্মসংস্থান ও শিক্ষার বৈষম্য বেড়ে চলার উদাহরণ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামল থেকে বৈষম্য দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় (১৯৭৪ সাল) জাতীয় আয়ে বৈষম্য ছিল দশমিক ২৪। বর্তমানে সেটা হয়েছে দশমিক ৪৮।’

বৈষম্য সমাজকে ভেঙে ফেলে বলে মন্তব্য করে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ফাঁকটা হলো এখানে, সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে যত টাকাপয়সা এসেছে, তা কি ১৬ কোটি লোকের কাছে, নাকি কিছু লোকের কাছে গেছে? এখন কিছু লোক বড়লোক হয়েছে। প্রবৃদ্ধি থেকে যা এসেছে, তা পাহাড়ের ওপর দিয়ে গিছে, সমতল ভূমিতে পৌঁছায়নি।’

সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম সংবিধান অনুসরণে মানুষের জীবনমান ও বৈষম্য নিরসন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন একটা দায়িত্ব নিয়ে আসে। এটা টেকসই রাখার সক্ষমতা আমাদের আছে কি না?’

উন্নয়নের প্রথম দিকে বৈষম্য বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এক্ষেত্রে তিনি চীন ও ভারতের উদাহরণ টানেন। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যের লাগাম টেনে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

দারিদ্র্য বিমোচনের হার ক্রমেই কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বেশি উদ্বেগের বিষয়, দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতির হারটা ক্রমেই কমে আসছে।’

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বাজার অর্থনীতির মধ্যে বৈষম্যসহ নানা ধরনের ভঙ্গুরতা থাকার উদাহরণ দেখান। তিনি বলেন, ‘বাজার অর্থনীতির মধ্যে অনেক রকম ভঙ্গুরতা রয়েছে। আমাদের নিজেদের অনেক সৃজনশীল হতে হবে। আমেরিকায় বৈষম্য অনেক বেশি।’ যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে বৈষম্য বেড়েছে, তা একটি বইয়ের বরাত দিয়ে তুলে ধরেন তৌফিক ইলাহী।

যেসব মাপকাঠিতে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে, তা গোলটেবিলে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক (ইভিআই) এ তিন ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে এ তিনটি শর্ত একসঙ্গে পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছে।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও বক্তব্য রাখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, পরিবেশবিদ আতিক রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন এক হাজার ২৭৪ ডলার।