এসএম রুবেল, মহেশখালী: ভাগ্য ফেরার স্বপ্ন নিয়েই গভীর সাগরে মাছ আহরণে যান জেলেরা। লোকসানের ঝুঁকি, ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা, অসুস্থতায় মৃত্যু, জলদস্যু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর ভয় ঘিরে ধরে সর্বক্ষণ। তারপরেও থেমে নেই গভীর সমুদ্রের বিশালাকার ঢেউয়ের সঙ্গে জেলেদের সখ্য।
উত্তাল সাগরের বুকে কাঠের তৈরি একখণ্ড ট্রলারেই জমে ওঠে জেলেদের রোমাঞ্চকর সংসার। মাছ আহরণের ফাঁকে ফাঁকে সেখানেই বসে গান-বাজনা আর পুঁতির আসর। একে অপরের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে মাছভর্তি ট্রলারযোগে কূলে ফেরার প্রতীক্ষায় কেটে যায় জেলেদের জীবন। ঠিকই কেউ কূলে ফিরে বোটভর্তি মাছ নিয়ে, কেউবা লোকসানের কালো মুখে, আবার কেউ জলদস্যু, ঘূর্ণিঝড় আর ঢেউয়ের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, জেলায় যন্ত্রচালিত ট্রলারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৪৯টি এবং অযান্ত্রিক নৌকার সংখ্যা এক হাজার ২৩৫টি। এসব ট্রলার ও নৌকায় নিবন্ধিত ৬৬ হাজার ১৯৩ জন এবং অনিবন্ধিত প্রায় ৫০ হাজার জেলে মাছ আহরণের কাজ করেন বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
সরেজমিনে কক্সবাজারের ফিশারি ঘাট, নাজিরারটেক, খুরুশকুল ও মহেশখালীর জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা ৬৫ দিন বন্ধের পর কিছুদিন মাছ আহরণ করা গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কূলে ফিরতে হয়েছে তাদের। এতে তারা লোকসানে পড়েছেন। এ মৌসুমে সাগরে জলদস্যুদের ভয় থাকে বেশি। ট্রলার লুটপাটের পাশাপাশি মাঝিমাল্লাদের মারধর করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় তারা। এছাড়া ট্রলার মালিকরা মাঝিমাল্লাদের লাইফজ্যাকেট না দেয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির শঙ্কা থাকে তাদের।
ট্রলারের মাঝি জমির উদ্দিন জানান, গত শীতকালে তার ট্রলারে জলদস্যু হানা দিয়ে জাল, মাছ, জ্বালানি তেল ও মজুতকৃত খাবার লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে জখম করে। টানা ছয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর পেটের দায়ে আবারও সাগরে নামতে হচ্ছে।
ডাকাতির শিকার হওয়া এফভি আল্লাহর দান ট্রলারের মালিক সলিম উল্লাহ জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর রট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন, বড় ট্রলারগুলো প্রায় ১৫ দিন মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে সাগরে নামে। একবার সাগরে নামতে প্রায় পাঁচ-ছয় লাখ টাকার খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হয়। কাক্সিক্ষত মাছ আহরণে ব্যর্থ হলে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ডাকাতদের কবলে পড়লে মালিকদের গুনতে হয় মোটা লোকসান। এভাবে অনেক ট্রলার মালিক নিঃস্ব হয়েছেন।
এদিকে জেলা মৎস্য কমকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানিয়েছেন, জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে এক হাজার ৬১০টি ট্রলারে গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল নেটওয়ার্ক (জিএসএম) ডিভাইস দেয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে প্রত্যেক ট্রলারকে এ ডিভাইসের আওতায় আনা হবে। এ ডিভাইসের মাধ্যমে আবহাওয়া ও দুর্ঘটনার খবর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছাবে। পাশাপাশি জেলেদের মানোন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।