হামিদুর রহমান: দেশব্যাপী দ্রুত সময়ে লেনদেনে বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চাহিদা বাড়ায় প্রতিষ্ঠান ও প্রতিযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও গ্রাহক টানতে কেবল মুঠোফোনেই সীমাবদ্ধ নেই মোবাইল ব্যাংকিং। বিল পরিশোধসহ নানা ধরনের সেবা যুক্ত করার পাশাপাশি এটিএম বুথ থেকেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা উত্তোলনের সুবিধা দিচ্ছে। এতে গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ছে।
অন্যদিকে রিটেইলারের চেয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন তথা ক্যাশ আউটের চার্জও কম। আর এই প্রক্রিয়ায় টাকা উত্তোলনে সর্বনিম্ন ক্যাশ আউট চার্জের শীর্ষে রয়েছে ‘উপায়’। ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের এ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিচ্ছে। আর এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ নিচ্ছে আট টাকা যা বাজারে থাকা সব প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের রকেটে প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ নিচ্ছে ৯ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশে প্রতি হাজারে চার্জ গুনতে হচ্ছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। অন্যদিকে নগদে গ্রাহকরা বুথ থেকে সেবাটি দিতে পারছেন না, তবে ডাকঘর থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন নগদ গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে প্রতি হাজারে গ্রাহকদের চার্জ গুনতে হচ্ছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা।
গ্রাহকদের কাছ থেকে এটিএম বুথের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে তারা জানান, ‘ টাকা উত্তোলনে রিটেইলারের চেয়ে এটিএম বুথে সুবিধা বেশি, খরচও কম। কেননা রিটেইলার পয়েন্ট একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া খোলা পাওয়া যায় না। আর এটিএম বুথে ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়, যে কারণে এটিএম বুথে মানুষের এখন আগ্রহ বাড়ছে। আর এ সেবায় বর্তমান সময়ে ক্যাশ আউটে সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়।
দেশে সর্বপ্রথম ২০১১ সালের মার্চে চালু হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৮টি। এই মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ১৪১ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
বর্তমানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিলেও এ খাতের বেশিরভাগ গ্রাহক নিয়ন্ত্রণ করছে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট করে বললে লেনদেনের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ, ডাক বিভাগের নগদ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট।
তবে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এই একচ্ছত্র প্রভাব ভেঙে শীর্ষস্থান অর্জন করতে চায় ‘উপায়’। এজন্য বিদ্যমান সব এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সর্বনিম্ন সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করেছে ‘উপায়’। পাশাপাশি তাদের এই সেবাটি ইউএসএসডি বাটন ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক। এর মধ্যে দিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের কাছে নিজেদের সেবাটি পৌঁছে দিতে চায় তারা।
এ ব্যাপারে উপায়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল হক খন্দকার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে বাটন বা ফিচার ফোন ব্যবহারকারীই বেশি। আমাদের নিজস্ব সমীক্ষায় দেখেছি যে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ মোবাইল লেনদেন সম্পন্ন হয় ইউএসএসডি বাটন ফোনের মাধ্যমে। এই ব্যবহারকারীরা মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ। আমরা এই জনগোষ্ঠীর সুবিধার কথা ভেবেই ইউএসএসডির মাধ্যমে লেনদেনকারীদের জন্য বাজারের সবচেয়ে কম রেটে ক্যাশ আউট চার্জ নির্ধারণ করেছি।’
ইউসিবি ব্যাংকের শতভাগ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত সাবসিডিয়ারি ‘উপায়’। গত ১৭ মার্চ এমএফএস তথা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথচলা শুরু করে তারা।