উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সালের ১১ তারিখের  ঘটনার পর ১২ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ধর্মঘট পালন করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ১৫ মার্চ খাজা নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সাপেক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে আটটি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকারের এ নমনীয় আচরণের প্রধান কারণ ছিল, ১৯ মার্চ জিন্নাহর ঢাকা আগমন। তার আসার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত করার জন্য নাজিমুদ্দিন চুক্তিতে রাজি হন। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়নি। চুক্তিতে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তারকৃত বন্দিদের মুক্তি, পুলিশের অত্যাচারের নিরপেক্ষ তদন্ত, বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া, সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় এসে পৌঁছান পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও সেখানে তিনি ভাষণে ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী, কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়’। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘জনগণের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা পাকিস্তানের শত্রু এবং তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না।’

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের পর মনে হয়েছিল, ভাষা আন্দোলন বুঝি শেষ হয়ে গেছে। ছাত্ররা প্রতি বছর ১১ মার্চ ভাষা দিবস পালন করতেন। ১৯৪৮ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পূর্ববঙ্গ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাকে সরকারি ভাষারূপে প্রবর্তন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও সে প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। ১৯৫০ সালের ২ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের সভায় পূর্ববাংলার সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হোক এবং প্রত্যেক নাগরিকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।

১৯৫০ সালের ৪ ও ৫ নভেম্বর লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক পাকিস্তানের সাংবিধানিক মূলনীতি সম্পর্কে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাতে বলা হয়: পাকিস্তানের উভয় অংশের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা ও উর্দু। ১২ নভেম্বর এই সুপারিশের বিরুদ্ধে সারা পূর্ববাংলায় বিক্ষোভ হয়। এতে পাকিস্তান সরকার ভয় পেয়ে ২১ নভেম্বর গণপরিষদেও ভাষা-সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত ঘোষণা করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০