Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:10 pm

উল্টো হিসাব কষছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে পতনের রেশ কাটাতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। হঠাৎ ছন্দপতনের সঙ্গে বড় পতন এসে বিনিয়োগ নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা উল্টেপাল্টা করে দিচ্ছে। পতনের কারণে কিছুদিন আগেও যারা দৈনিক লাভের হিসাব কষছিলেন তারা এখন মগ্ন আছেন লোকসানের হিসাব নিয়ে। এরই মধ্যে গতকালের পতনে তাদের দুশ্চিন্তা আরও ভারী হয়েছে।

আগের কার্যদিবসে বড় পতন হওয়ার পর গতকাল আবারও বড় পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৭৬ পয়েন্ট। সূচকের অবস্থান হয়েছে সাত হাজার ২০ পয়েন্টে। পাশাপাশি একযোগে কমেছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। মূলত বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুজবে এ পতন হয় বলে জানা যায়।

গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে দর কমে ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং ইউনিটের। পক্ষান্তরে দর বৃদ্ধি পায় ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনটের। বাকিগুলোর দর অপরিবর্তিত ছিল।

এদিকে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার এবং ইউনিটদর কমার কারণে গতকাল উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে বাজার মূলধন। দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ও ফান্ডের ইউনিটের বাজার মূলধন কমে গেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। আর গত সাত দিনে বাজার মূলধন কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে বড় পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন। বাজার পরিস্থিতি কী হবেÑতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে রাশেদুল ইসলাম নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, বাজার পরিস্থিতি ভালো দেখে বহুদিন পর নিয়মিত লেনদেন শুরু করেছিলাম। কিছু মুনাফার আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করে এখন উল্টোচিত্র দেখছি। লাভের বদলে প্রতিদিন লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে আমাদের অবস্থা আরও করুণ হবে।

এদিকে বাজারের অস্বাভাবিক পতনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে গতকাল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএসইসি কর্তৃপক্ষের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাজারের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়।

বৈঠকে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন এবং এ সময় নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ডিবিএ, বিএমবিএ ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পতনের প্রাথমিক তিনটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়। এগুলো হচ্ছেÑদীর্ঘ উত্থানের পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী তাদের মুনাফা সংগ্রহ করা। এছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ ও সরকার থেকে দেয়া এক হাজার কোটি টাকার তহবিল ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে সূচকের পতন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠক শেষে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি মহল পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। এই বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।’ বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পুঁজিবাজারের জন্য আমরা কাজ করছি, চেয়ারম্যানও কাজ করছেন। কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠী যদি পুঁজিবাজারের কারসাজি করতে চায়, বা ক্ষতি করতে চায়, আমরা এখন অনেক শক্তিশালী।’

তিনি জানান, তারা জানতে পেরেছেন যে, বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেনÑএমন গুজব ছড়ানো হয়েছে কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই। মহলটি গুজব ছড়িয়েছে যে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হবে।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিরোধ আছে। অবণ্টিত লভ্যাংশ ও আমানতের মধ্যে যে পার্থক্য সেটি নিয়েও আমাদের মতপার্থক্য আছে। আমাদের চেয়ারম্যান যদি ওখানে যান, তাহলে এটা তো আমাদের আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। তাহলে তো সেটা পুঁজিবাজারের জন্য আরও ভালো হবে, আরও সৌভাগ্যের বিষয় হবে। এটা তো লুকোচুরির কিছু নয়। এটা নিয়ে গুজব ছড়ানো কিছু নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার যে তহবিল করা হয়েছিল, সেটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন বাজার ভালো ছিল, এখন আবার সূচকের নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এদিনে মোট সূচকের এক শতাংশের বেশি পতন হলে তাকে বড় পতন বলা যায় কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বড় পতন নয়। বাজারের যে পরিস্থিতিই থাকুন না কেন বিনিয়োগকারীদের তা মানিয়ে নেয়া উচিত। এটা না করে তারা যদি উল্টে কম দরে শেয়ার বিক্রি করে দেন তাহলে বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পাশাপাশি তারা নিজেরাও ক্ষতির মুখে পড়েন।’

একই প্রসঙ্গে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের সঠিক আচরণ করছেন না। সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতো তারাও প্রতিনিয়ত মুনাফা তুলে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। বর্তমানে বাজারে আদের উপস্থিতি কম। যে কারণে বাজার তার আসল চিত্রে ফিরে যেতে পারছে না।