নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অবরুদ্ধ নগরী উহান থেকে দেশে ফেরানো ৩১৪ জনের মধ্যে সাতজনের শরীরে জ্বর থাকায় তাদের পাঠানো হয়েছে ঢাকার একটি হাসপাতালে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে এ বাংলাদেশিরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বলে বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান।
বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহারিয়ার সাজ্জাদ বলেন, জ্বর থাকায় সাতজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের নেওয়া হয়েছে আশকোনো হজ ক্যাম্পে। চীনফেরত এ বাংলাদেশিদের যে আশকোনো হজ ক্যাম্পে রেখে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পর্যবেক্ষণের এ সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেন ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সেজন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। আশকোনো হজ ক্যাম্পে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। কারও মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানান্তর করা হবে হাসপাতালে।
আশকোনোয় কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণের এ পুরো বিষয়টিতে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, ফ্লাইটে ৩১৪ জন এসেছেন। আরও দুজনের আসার কথা থাকলেও শরীরে জ্বর থাকায় তারা চীনে রয়ে গেছেন। মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এর লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। নভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেনÑতাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা।
গত এক মাসে শুধু চীনেই ১১ হাজারের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২৫৯ জনের। চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং কয়েক জায়গায় মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর খবর আসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত ১১ দিন ধরে উহান শহর কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেকের ঘরেই খাবারে টান পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সেখানে থাকা প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির দিন কাটছিল আতঙ্কের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। কিন্তু চীন সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তা বিলম্বিত হয় বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন।
চীনের সম্মতি পাওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রæত আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এরপর এক দিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ পাঠানো হয় চীনে। উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শুক্রবার দুপুরে থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় উহানের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে। চীনের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৯টায় তিয়ানহি বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানের ওই উড়োজাহাজ। এরপর চলে যাত্রীদের দফায় দফায় পরীক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতার পর্ব। রাতভর অপেক্ষার পর স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ভোর পৌনে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টায়) তাদের নিয়ে দেশের পথে রওনা হয় বিমান। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবাইকে পরীক্ষা করা হয়। তার আগেই বাইরে প্রস্তুত রাখা হয় বিআরটিসির আটটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এবং কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মালামাল নেওয়ার জন্য রাখা হয় চারটি ট্রাক। পরীক্ষা শেষে সাতজনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে বাকিদের বাকিদের আশকোনা হজক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহারিয়ার সাজ্জাদ জানান।