উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাভ হবে ১১৮%, কমবে রাজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সুযোগ প্রদান করে চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে গুল-জর্দায় করারোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বাতিল করে খুচরা মূল্যের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হলেও চূড়ান্ত বাজেটে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা এবং গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছিল। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত ১৬৮ শতাংশ। অথচ চূড়ান্ত বাজেটে খুচরা মূল্যের ওপর করারোপের আধুনিক এবং সহজতম পদ্ধতি থেকে সরে এসে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের জন্য যথাক্রমে ১২ টাকা এবং ছয় টাকা ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে এর ওপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে। হিসেবে দেখা গেছে, এর ফলে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং একই পরিমাণ তামাক বিক্রি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৮ শতাংশ বেশি আয় করবে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ২৫ টাকা খুচরা মূল্যে ১০ গ্রাম জর্দা বিক্রি করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো পেত পাঁচ দশমিক ২৪ টাকা। অথচ চূড়ান্ত বাজেট অনুযায়ী একই পরিমাণ জর্দা বিক্রি করে কোম্পানিগুলো এখন পাবে ১২ টাকা। এই আয়বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। নিজেদের এ অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধির হার কিছুটা কমিয়ে হলেও তামাক কোম্পানিগুলো সস্তায় ভোক্তাদের হাতে তামাকপণ্য তুলে দিতে মরিয়া হবে। কারণ চূড়ান্ত বাজেটে সর্বনি¤œ খুচরা বিক্রয়মূল্য শর্ত প্রত্যাহার করায় তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে বাজারে জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য প্রত্যাশিত হারে নাও বাড়তে পারে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে জর্দা ও গুলের ব্যবহার প্রত্যাশিত হারে হ্রাস পাবে না। ফলে জনস্বাস্থ্য কাক্সিক্ষত মাত্রায় সুরক্ষা পাবে না। এভাবেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করা হয়েছে বলে বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব পণ্যে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। দেশে এখনও অসংখ্য রেজিস্ট্রেশনবিহীন জর্দা ও গুল কারখানা থাকায় ওইসব কারখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন হচ্ছে। সুতরাং জর্দা ও গুলের ওপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রেও এনবিআরের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে করারোপে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতির পরিবর্তে বিড়ি-সিগারেটের ন্যায় খুচরা মূল্য নির্ধারণ হবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
এনবিআর সূত্র জানায়, গুল-জর্দা কোম্পানির বেশিরভাগই ঠিকানাবিহীন। নেই কর ও মূসক নিবন্ধন। সেজন্য সঠিকভাবে কর ও মূসক আদায় করা যায় না। ফলে দ্রুত অগ্রগামী এ খাত থেকে সরকার সঠিকভাবে রাজস্ব পায় না। সম্প্রতি এনবিআরের মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স ঢাকাসহ সারাদেশে ৪২১টি গুল-জর্দা কোম্পানির একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে কর পরিশোধ করেছে কি না, তা যাচাই শেষে প্রতিবেদন দিতে সব ভ্যাট কমিশনারেটে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০