উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, হুমকিতে আখ চাষ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কয়েক দশক আগেও শরীয়তপুরের কৃষকরা হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আখের চাষ করতেন। সময়ের বিবর্তনে আখ চাষের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় এই অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। পূর্ব ডামুড্যা এলাকার শাহিন প্রধানের চাষ করা আখ একসময় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি হতো। চাহিদা কমে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি মাত্র ১০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। শাহীন প্রধানের মতো জেলার সব এলাকার চাষিদের আগ্রহ কমছে আখ চাষে, যার প্রমাণ মিলেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আখ চাষের লক্ষ্য মাত্রায়। খবর: ঢাকা পোস্ট।

সম্প্রতি ডামুড্যা বাজারে পাইকারি ও খুচরা আখ বিক্রি করতে দেখা গেছে শাহীন প্রধান ও বাবুল মামুদসহ কয়েকজনকে। এসব বিক্রেতাদের সারা বছরের খরচ চলত আখ চাষ ও বিক্রি করে। কিন্তু এখন বাপ-দাদার কাছে শেখা আখ চাষ পেশাকে ধরে রেখেছেন ছোট পরিসরে।

শাহীন প্রধান, বাবুল মামুদসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা ও মেঘনাবেষ্টিত শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চলগুলোয় একসময় প্রচুর পরিমাণে আখ উৎপাদন হতো। এর মধ্যে ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা, গুয়াখোলা, মুন্সিরটেক, টেকপাড়, উত্তর ডামুড্যা, রাম রায় কান্দি, গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর, কুচাইপট্টি, নলমুড়ি, নাগেরপাড়া, আলাওলপুর, জাজিরা উপজেলার মাঝিরহাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা আখ চাষের জন্য বেশ উর্বর ছিল। এই অঞ্চলের আখ ইঞ্জিনচালিত বড় বড় কাঠের ট্রলারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হতো।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দশক আগেও জেলায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ চাষি আখ চাষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাত্র চার শতাধিক কৃষক আখ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। জেলায় চলতি বছর আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ হেক্টর জমি। তবে সেখানে ৩২০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। গত বছর আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছিল ৩৮০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ফলন হয়েছিল ২৩ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে গত এক বছরে আখের আবাদ কমেছে ৬০ হেক্টর জমিতে।

আখচাষি শাহীন প্রধান (৫৫) বলেন,  প্রায় ৩০ বছর ধরে আখ চাষ করি। একসময় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করতাম। তখনকার দিনে আখের চাহিদাও ছিল অনেক। আখ জমি থেকেই শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, বুড়িরহাট, ভেদরগঞ্জ, বরিশালের মূলাদি ও ঢাকার সদরঘাট অঞ্চলের পাইকাররা কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এখন আর পাইকাররা জমি থেকে আখ কিনতে আসে না। এখন আখ বিক্রি করতে হয় ডামুড্যার পাইকারি বাজারে। দিন দিন আখ চাষ ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়ায় এ বছর মাত্র ১০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি।

তিনি আরও বলেন, একসময় আমাদের উৎপাদন ব্যয় ছিল কম, তাই বেশি জমিতে উৎপাদন করা যেত। দিন দিন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু চাহিদা বাড়েনি। একসময় প্রতি হাটবারে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজারটি আখ বিক্রি করতাম আর এখন ৪০০টি বিক্রি করতেই কষ্ট হয়। এছাড়া আখ চাষে সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই না। সরকারের কাছ থেকে আমাদের আখচাষিদের জন্য যদি কীটনাশক ও সার বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হতো, তবে আখচাষিদের আগের মতো সুদিন ফিরে আসত।

সদর উপজেলার শৌলপাড়া এলাকার আবুল হোসেন মাদবর (৪৫) বলেন, আখ চাষ করে নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়। একসময় পাঁচ বিঘা জমিতে আখ চাষ করতাম। এখন ৪০ শতাংশ জমিতে আখ করি। প্রচুর খরচ আখ চাষে। পাইকাররা আসে না। বাজারে বাজারে নিজের হাতে খুচরা বিক্রি করতে হয় আখ। ১০ বছর আগেও বাজারে ৫০ জনের বেশি পাইকার আসত। এখন পাঁচজন পাইকার এলে আমার মতো চাষির মুখে আনন্দ ফুটে।

পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদার বলেন, ১৫ বছর আগে ডামুড্যা বাজারে আমার মতো ৫০ জন পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন মাত্র ১০ জন আখ ব্যবসায়ী টিকে আছেন। আগে এক দিনে দুই লাখ টাকার আখ বিক্রি হতো। আর এখন ৫০ হাজার টাকাই বিক্রি হয় না।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, আখ ফসলটি মূলত শিল্প মন্ত্রণালয় তদারকি করে থাকে, এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত নয়। তাছাড়া যেসব অঞ্চলে চিনিকল রয়েছে, সেসব অঞ্চলের আওতাভুক্ত আখচাষিদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের এই অঞ্চল চিনিকলের আওতাভুক্ত না হওয়ার কারণে আখচাষিদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তবে তারা যেহেতু আমাদেরই কৃষক, আখ চাষের বিষয়ে কোনো পরামর্শ চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০