নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েক মাস ধরে প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলসের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) উৎপাদন বন্ধ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এতে কোম্পানির তথ্য অজানা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ গত সোমবার কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ১৫ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রাইম টেক্সটাইলের শেয়ার।
কোম্পানির সূত্রে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পোশাক খাতে ব্যবসার করে আসা প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ এবং দেশের ডলার সংকটে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে উৎপাদন কার্যক্রম সীমিত পরিসরে বন্ধ করে দেয়। জনবল কমিয়ে ছোট করে আনা হয় প্রতিষ্ঠাটির কলেবর। আর আর্থিক হিসাব সংক্রান্ত জটিলতায় সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ডিএসইর তথ্য মতে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রাইম টেক্সটাইলকে গত তিন মে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা করা হয়।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাইম টেক্সটাইল ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ লভ্যাশ প্রদান করলেও পরের তিন বছরে দুই শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদান করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ শতাংশ, ২০২১ সালে ২ শতাংশ এবং ২০২২ সালে মাত্র ২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
২০২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৬১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৮ পয়সা। আর তিন প্রান্তিক মিলে (জুলাই’২২-মার্চ’ ২৩) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৫ টাকা ৮১ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪৮ পয়সা। আর ৩১ মার্চ ২০২৩ শেষে নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৬৮ টাকা ৬৯ পয়সা।
এছাড়া ২০২২ হিসাববছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৩ পয়সা এবং নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৭৪ টাকা ৬৫ পয়সা। আগের হিসাববছরে ইপিএস ছিল ৬২ পয়সা এবং এনএভিপিএস ছিল ৬৭ টাকা ৯৩ পয়সা। এছাড়া ২০২০ হিসাব বছরে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৬৭ পয়সা এবং এনএভিপিএস ছিল ৬৭ টাকা ২৭ পয়সা এবং ২০১৯ হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৫৪ পয়সা এবং এনএভিপিএস ছিল ৪৮ টাকা ৪৩ পয়সা। প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেড ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৪৪ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
প্রাইম টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব মনজুরুল হাসান তালুকদার কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোম্পানির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ থাকার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানাসহ আরও কিছু শাস্তি দেওয়া হতে পারে।