মেহেদী হাসান, রাজশাহী: এশিয়ার জনপ্রিয় শাহীওয়াল জাতের বকনা গরু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে রাজশাহীর দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার। গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত এ খামারটি অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। উৎপাদনের দিক দিয়ে এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম খামার এটি।
সরকারি এ খামারটির উপপরিচালক ডা. মো. আতিকুর রহমান শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে খামারে গাভী পালনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে শতভাগ। বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে ১৫৩ শতাংশ, বাড়ন্ত বকনা ১২৬ শতাংশ, বাড়ন্ত এঁড়ে ১০৭ শতাংশ ও দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ১১৭ শতাংশ। এছাড়া ঘাস উৎপাদনের জন্য ৮০ একর জমির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও শতভাগ পূরণ হয়েছে। ১৬০০ টন ঘাস থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দুই হাজার ৮৩৪ টন ঘাস উৎপাদন হয়েছে, যা এর আগে কখনও সম্ভব হয়নি।
খামার সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৮ সালে এস্টাবলিস্টমেন্ট অব ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ব্রিডিং ফার্ম বর্তমানে আজকের রাজশাহী দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার। পর্যায়ক্রমে সংশোধিত বাজেটে ১৯৭৭ সালে প্রকল্পের জন্য রাজশাহীর ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশ মোতাবেক হুকুম দখলকৃত ২০০ একর জমির বিপরীতে ১৭৯ একর জমি দখল করা হয়। ১৯৭৭ সালে প্রথম রিভিশন ও ১৯৮০-৮১ সালে দ্বিতীয় রিভিশনে ‘রাজশাহী ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট ফার্ম’ নামকরণ করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯৮৪ সালে ১৭৮টি গাভী দিয়ে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৭৯ একর জমিতে বিশাল খামার হলেও এখন জমির পরিমাণ কমে হয়েছে ৯২ দশমিক ৪৩ একর।
দীর্ঘদিন ধরে এ খামারটি গবাদি পশুর জাত উন্নয়নে অবদান রাখছে। বর্তমানে সর্বমোট ৭৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ৩২৩টি গবাদি পশুর দেখভাল করছেন। এছাড়া খামারের হিসাবের বাইরে ৪২টি প্রজনন ষাঁড় এআই ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা থেকে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া খামারে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৩টি গাভী দুগ্ধ ও বাচ্চা উৎপাদনে রয়েছে। এ সময় এক লাখ ৩০ হাজার ৮২ লিটার দুধ উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে বাচ্চার খাদ্য হিসেবে ৩৭ হাজার ৮৮৫ লিটার ও বিক্রি করা হয়েছে ৬৫ হাজার ১৯৭ লিটার দুধ। বিক্রি করা দুধ থেকে বেশ রাজস্ব আয় হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে কিছু সমস্যার কথাও জানা গেছে, কাঠামোগত ও কর্মকর্তা পর্যায়ে জনবলের অভাব রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। সে সঙ্গে খামারের সীমানা প্রাচীর সম্পূর্ণ সংস্কারের অভাবে ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে। এতে খামারের ভেতরে ঢুকে চাষকৃত ঘাস চুরি হচ্ছে, বিঘিœত হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একটি ডিপ টিউবওয়েল থাকলেও তা বিকল। নেয়া হয়নি মেরামত কিংবা পুনস্থাপন কার্যক্রম। নেই লাইভস্টক অফিসার ও ফডার কাল্টিভেশন অফিসার, যা নিয়োগ একান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খামারে জনবলের চাহিদাপত্রে দেখা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে বায়ার ওভারশিয়ার, সহকারী অ্যাগ্রিকালচার ওভারশিয়ার, এফএ বা এআই টেকনিশিয়ান, কম্পাউন্ডার, ইলেকট্রিয়ান কাম মেকানিক, পাম্প ড্রাইভার, রেশনরুম অ্যাটেনডেন্ট প্রতিটি শূন্য পদে একজনকে নিয়োগ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আতিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, খামারে কিছু সংস্কার কাজ চলমান। ঘাট উৎপাদনে আমরা প্রায় দ্বিগুণ এগিয়েছি। প্রতিদিন ৮০০ কেজি ঘাস কাটা হয়। বছরে প্রায় ২৬ লাখ ঘাস উৎপাদন হয় এ খামারে। আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে চললেও সেভাবে আমাদের দিকে দেখার নজর নেই। যেসব বিভাগে জনবলের সংকট রয়েছে সে বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অবগত করা হয়েছে। শিগগির সমাধান হবে। এছাড়া বর্তমান যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই খুবই দক্ষ, তাদের দিয়েই কাজ সম্পাদন হচ্ছে।