উৎপাদন শুরুর ২১ মাস পর নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৫৪%

ইসমাইল আলী: পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে ২০২০ সালের ১৫ মে। ওই বছর ৮ ডিসেম্বর উৎপাদনে আসে দ্বিতীয় ইউনিটটি। তবে উৎপাদন শুরুর পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বাড়তি ব্যয় দাবি করে বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের প্রায় ২১ মাস পর ওই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে বাড়তি নির্মাণব্যয় অনুমোদন করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে নির্মাণব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ৫৪ শতাংশের বেশি। তবে এ নির্মাণব্যয় হিসাব করা হয়েছে ডলারে। তবে গত ছয় বছরে ডলারের বিনিময় হার অনেক বেড়ে গেছে। ২০১৬ সালে ১ ডলার = ৭৮.৪০ টাকা ছিল। বর্তমানে ১ ডলার = ১০৬ টাকা। সে হিসাব বিবেচনায় নিলে নির্মাণব্যয় বেড়ে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি।

তথ্যমতে, পায়রা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যৌথ মালিকানায় রয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন লিমিটেড (সিএমসি)। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে দুই কোম্পানি সমান ১০ শতাংশ হারে মোট ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। বাকিটা চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে পিজিসিবিব সঙ্গে বাস্তবায়নকারী কোম্পানি বিসিপিসিএল বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) সই করে। একইদিন পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিও (পিপিএ) সই করা হয়। এছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর বিসিপিসিএল ও এনডব্লিউপিজিসিএলের মধ্যে জমি ইজারা-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। এর আগে ২৯ মার্চ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চীনের দুটি কোম্পানির

 সঙ্গে ইপিসি চুক্তি সই করে বিসিপিসিএল। সে সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৬ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার কথা ছিল ১২৮ কোটি ডলার।

যদিও পরের বছর (২০১৭ সালের) জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা (১ ডলার = ৮০ টাকা)। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১৬০ কোটি ডলার। তবে ২০১৮ সালের ৩ মে চীনের এক্সিম ব্যাংক পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। সে সময় এর সম্ভাব্য নির্মাণব্যয় ধরা হয় ২৪৮ কোটি ডলার। তবে সে ব্যয় চূড়ান্ত ছিল না।

এজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর পুনরায় নির্মাণব্যয় প্রাক্কলন করে বিসিপিসিএল। এতে নির্মাণব্যয় দাবি করা হয় ২৫২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। তবে সে দাবির বিভিন্ন খাত যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি গঠন করে পিডিবি। প্রথমে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৯ সদস্য করা হয়। ওই কমিটি সব বিষয় যাচাই-বাছাই শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণব্যয় চূড়ান্ত করেছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

এতে দেখানো হয়েছে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪১ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এতে নির্মাণব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ৮৫ কোটি ডলার। তবে বিনিময় হার পরিবর্তনের ফলে নির্মাণব্যয় দেশীয় মুদ্রায় বেড়েছে ১৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বা ১০৯ শতাংশ। এছাড়া নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে গত দুই বছর প্রদত্ত ক্যাপাসিটি চার্জ সমন্বয় করতে হবে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ডিজাইন, নির্মাণ (পরামর্শকসহ), অর্থায়ন (নির্মাণকালীন সুদসহ), পরীক্ষা ও কমিশনিংয়ে ব্যয় দাবি করা হয় ২২৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। তবে পিডিবির কমিটি তা ২২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার নির্ধারণ করে। আর কমন সার্ভিসে এক কোটি ৪৫ লাখ ডলার দাবি করলেও তা কমিয়ে ৯৬ লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়। একইভাবে রিটার্ন অন ইক্যুইটি ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার দাবি করা হলেও তা ১২ কোটি ৭১ লাখ ডলার ধরা হয়েছে। এছাড়া ড্রেজিং ও কয়লা সংরক্ষণাগার তৈরিতে বাড়তি ৪২ লাখ ডলার দাবি করা হলেও তা কমিয়ে ২৫ লাখ ডলার ধার্য করেছে কমিটি।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক ও পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) মো. ফজলুল হক বলেন, পায়রা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর বিসিপিসিএল চূড়ান্ত ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয়ের চেয়ে তা অনেক বেশি ছিল। তাদের দাবির বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই তা পিডিবির বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০