সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে একটি সহায়ক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতির জন্য নতুন ক্ষেত্র তৈরি করছে। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করায় তাদের আস্থা অর্জনে সফলও হয়েছে সরকার। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে অগ্রগামী করার জন্যই বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকালে বুধবার সৌদি রাজপ্রাসাদে দেশটির ব্যবসায়ীদের সংগঠন সৌদি চেম্বার ও রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। তিনি সেখানে উভয় দেশের স্বার্থে সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। গতকাল শেয়ার বিজে সংবাদটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন উদীয়মান খাত, যেমন পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধশিল্প, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাত, হালকা প্রকৌশল শিল্প, ব্লু-ইকোনমি, গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি ও সমুদ্রসম্পদ, অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প ও সেবামূলক খাত, যেমনÑব্যাংকিং ও অর্থনীতি, লজিস্টিক ও মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে আইন দিয়ে সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক, বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, রেমিট্যান্স অন রয়্যালটি, শতভাগ ফরেন ইকুইটির নিশ্চয়তা, লাভ ও পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাওয়ার সুবিধা।
সৌদি আরবে বর্তমানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তন সামাজিক খাতে যেমন, তেমনই ঘটছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এখনও সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ দায়িত্ব গ্রহণের পর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সে দেশে পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। এটিও সত্য যে, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কম মূল্যে শ্রমশক্তি পাওয়ার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তাই এ সময়ে সৌদি আরব উচ্চপর্যায়ের সফর এবং সে দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি সময়োচিত। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাতে সে দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসেন, সেজন্য তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এখন।
সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত পণ্যের বাজার নিশ্চিতের বিষয়ে চিন্তিত হতে পারেন। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বৃহৎ শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশের সুবিধাসহ বিনিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয়ের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। এখন প্রয়োজন সৌদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগে উৎসাহী করা। যারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন, তাদের জন্য শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করে সহজে বিনিয়োগে সহায়তা জোগানো দরকার। তাহলেই সৌদি সরকারের বর্তমান নীতির সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে সৌদি আরবে শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার ঝুঁকি মোকাবিলাও সম্ভব হবে।
উৎসাহিত হোক সৌদি বিনিয়োগ
