নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা রপ্তানি আয় বাড়াতে ব্যবসায়ীদের আরও সুবিধা দিল সরকার। এখন থেকে রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর উৎসে কর কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। এতদিন ব্যবসায়ীদের রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) গত জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। এতে চলতি অর্থবছর ব্যবসায়ীদের ৩৬৫ কোটি টাকা বেঁচে যাবে বলে জানা গেছে। যদিও নগদ সহায়তার ওপর উৎসে কর তিন শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিলেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিদলের একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রপ্তানি বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে উৎসে করে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। এটি করলে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে। রপ্তানির বিপরীতে দেওয়া সরকারের নগদ সহায়তার ওপর উৎসে কর বর্তমানে ১০ শতাংশ রয়েছে। এটি তিন শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করেন তারা।
রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দিতে সাত হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। অবশ্য এই পরিমাণ অর্থ থেকে উৎসে কর বাবদ সরকারের ঘরে ফেরত যাবে ৭৩০ কোটি টাকা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উৎসে কর বাবদ সরকারের ঘরে ফেরত যাবে ৩৬৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা অর্থাৎ ৩৬৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের।
এনবিআরের পক্ষ থেকে গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৪-এর সেকশন ৪৪-এর সাব-সেকশন (৪)-এর ক্লজ (বি)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার রপ্তানি নগদ ভর্তুকির (নগদ সহায়তা) ওপর উৎসে কর কাটার হার ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করল।
এতে আরও বলা হয়, রপ্তানির বিপরীতে আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম ছয় মাস শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ডিসেম্বর শেষে রপ্তানি আয় হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এই সময়ে খাতটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ছয় দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানিতে আয় ছিল এক হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় দুই হাজার ২১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। কিন্তু এ সময়ে আয় হয়েছে এক হাজার ৯৩০ কোটি ২২ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।